মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বোমা হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে “অত্যন্ত সফল” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের ফরদো, নাটাঞ্জ এবং ইসফাহান—দেশটির সবচেয়ে সুরক্ষিত ও কৌশলগত পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো। বিশেষ করে ফরদো কেন্দ্রটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত, যাকে ধ্বংস করতে একমাত্র সক্ষম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের B-2 স্টিলথ বোমারু বিমান ও বিশেষ ধরনের “বিশাল অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর” বোমা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “এই হামলা অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমাদের বিমান বাহিনী পূর্ণ অস্ত্রভাণ্ডারসহ আঘাত হেনেছে। সমস্ত মার্কিন বিমান নিরাপদে ইরানীয় আকাশসীমা ত্যাগ করেছে।”
এই হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অবহিত করেছিল, এবং হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনালাপ হয়।
নেতানিয়াহু বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমি প্রায়ই বলি—শান্তি আসে শক্তির মাধ্যমে। প্রথমে শক্তি, তারপর শান্তি। আজ রাতে যুক্তরাষ্ট্র অনেক শক্তি দেখিয়েছে।”
ইসরায়েল বহুদিন ধরে দাবি করে আসছিল যে তারা একাই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামাতে সক্ষম। তবে বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছিলেন, পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ফরদোর মতো স্থাপনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সামরিক সক্ষমতা ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ফরদো পারমাণবিক স্থাপনার একটি অংশ “শত্রুপক্ষের হামলার” শিকার হয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি নিহত এবং ৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কয়েকদিন আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি এই যুদ্ধে প্রবেশ করে, তবে তা তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।”
হুথিদের হুমকি
ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের অংশ হয়, তবে তারা লাল সাগরে চলাচলকারী মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোতে হামলা চালাবে।”
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ডেমোক্র্যাট হাউজ মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিস বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসকে না জানিয়ে একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে এক বিপর্যয়কর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মুখোমুখি।”
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এ হামলাকে “অসাংবিধানিক” বলে মন্তব্য করে বলেন, “যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের আছে—প্রেসিডেন্টের নয়।”
যুদ্ধ শেষ না নতুন অধ্যায়ের শুরু?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো যদি কার্যত অচল হয়ে থাকে, তাহলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই আঘাত কি যুদ্ধের অবসানের সূচনা, না কি আরও রক্তক্ষয়ী ও বিধ্বংসী অধ্যায়ের সূচনা?
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহল, সামরিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে—এবার কী হবে?