খুলনা ব্যুরো: খুলনায় দুইদিনের ব্যবধানে এশিয়ান নার্সিং কলেজের দুই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।
শুক্রবার সুজাতা মণ্ডল ও শনিবার রাতে সীমা খাতুন নামের দুই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তারা দুইজনই নগরীর শেখপাড়া এলাকার পৃথক দুইটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
এর মধ্যে সুজাতা মণ্ডলের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আমিরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম শ্যামল কান্তি মন্ডল। তিনি এশিয়ান নার্সিং কলেজে বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
সীমা খাতুন ছিলেন ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলায়।
একই প্রতিষ্ঠানের দুই ছাত্রীর মৃত্যুতে অন্য সহপাঠীরা মুষড়ে পড়েছেন। দুইটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সুজাতা মণ্ডল কলেজের পাশে শেখপাড়া প্রধান সড়কের হাসিবুর রহমানের বাড়ির চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকতেন। শুক্রবার তার ঘর থেকে মোবাইল ফোন কলের শব্দ আসছিলো। কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না দেখে পাশের ঘরের বাসিন্দা কক্ষের ছিদ্র দিয়ে ঘরের সিলিংয়ে রাশ ঝুঁলতে দেখে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে দুপুরে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করে।
সহপাঠীরা জানান, বৃহস্পতিবার সুজাতা কলেজে যাননি। প্রতিবেশীরা জানান, বুধবারের পর থেকে তাকে ঘরের বাইরে দেখা যায়নি। তিনি একাই ওই ঘরে ভাড়া থাকতেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুজাতা ছিলেন সবার বড়।
লাশ উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা সোনাডাঙ্গা থানার এ এস আই আশিকা রেজা বলেন, ঘরের সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলতে থাকা মরদেহটি কিছুটা ফুলে গিয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে বুধবার বিকালে অথবা রাতেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। দীর্ঘ সময় লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকায় শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেধে গিয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শেখপাড়া হাজি ইসমাঈল ক্রস রোডের আমির মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সীমা খাতুনসহ আরো ৪ ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সবাই বাড়ি চলে যাওয়ায় সীমা একাই বাড়িতে ছিলেন। প্রতিবেশীদের সংবাদের ভিত্তিতে রাত ১টায় পুলিশ ঘরে ফ্যান ঝুলানোর হুকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে।
আপনজনকে হত্যা ও আত্মহত্যা ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়
ঘটনাস্থলে থাকা সোনাডাঙ্গা থানার এস আই আবদুল হাই বলেন, লাশে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। শুনেছি তিন মাস আগে তার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছিলো। স্বামীর নাম আজিম।
সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, দুইজনই সুইসাইড নোট দিয়েছে, মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তবে দুই ছাত্রীই যেহেতু একই প্রতিষ্ঠানের, এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা আমরা তদন্ত করছি। এছাড়া একজনের প্রেমের সম্পর্কের কথাও শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার যদি কোনো মামলা করতে চায়, আমরা মামলা নিবো।
সার্বিক বিষয় নিয়ে এশিয়ান নার্সিং কলেজের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিমা নূর লুবনার ব্যক্তিগত নম্বরে (০১৭৩৯-১৩৭৭৭৩) ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।
স্বাআলো/এস