আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টি (জাপা) নতুন করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভাঙনের মুখে পড়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে এ অংশ এখন কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে।
তাদের লক্ষ্য, আওয়ামী লীগের ‘লেজুড়বৃত্তি’র অভিযোগ থেকে দলকে মুক্ত করা এবং আগামীর রাজনৈতিক মাঠে জাতীয় পার্টিকে নতুনভাবে গড়ে তোলা। এ প্রক্রিয়ায় ভাঙনের সুর আরও স্পষ্ট হচ্ছে জাপায়।
২৮ জুন চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন জিএম কাদের। কিন্তু সরকারি অনুমতি না মেলায় সেই সম্মেলন স্থগিত করেছেন তিনি। অন্যদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও তার ঘনিষ্ঠরা কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করছেন। তাদের আশা, শিগগিরই প্রশাসনের অনুমতি মিলবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “২৮ জুন জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবেই। ভেন্যু পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।” তিনি অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে সম্মেলন স্থগিত করা অনৈতিক।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারার ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যানের একক নিয়োগ ও অপসারণ ক্ষমতা বাতিল করে দলকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে এবারের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
জিএম কাদের বলছেন, “আমাকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকার চায় জাতীয় পার্টি থেকে আমাকে সরিয়ে তাদের সুবিধাজনক দল গড়ে তুলতে।” তিনি আরও বলেন, “যারা আলাদা হচ্ছে, তারা চলে গেলে জাতীয় পার্টি কলঙ্কমুক্ত হবে।”
জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অংশ সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেয়েছে এবং ঐক্যের আশায় অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, “আমরা সবার অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক জাতীয় পার্টি চাই। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়েই ঐক্য চাই।”
২৮ জুনের সম্মেলনকে ঘিরে জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব ও নীতিগত দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্মেলনই নির্ধারণ করবে জাপার ভবিষ্যৎ—দলটি ঐক্যের পথে হাঁটবে, নাকি আরও একবার ভাঙনের পথে এগোবে।