ঢাকা অফিস: রাজধানীর ধানমন্ডির টুইন পিক টাওয়ারের ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ভবনের একটি রেস্তোরাঁকে জরিমানা ও একটি রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের অভিযোগে সোমবার (৪ মার্চ) অভিযান চালিয়ে রেস্তোরাঁগুলো সিলগালা করা হয় বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজউক পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার জানান, নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের অভিযোগে রেস্তোরাঁগুলো সিলগালা করা হয়।
তিনি বলেন, ভবনটি মূলত ‘এফ’ ক্যাটাগরির। এটি অফিসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হলেও সেখানে অবৈধভাবে প্রায় ১২ থেকে ১৫টির মতো রেস্টুরেন্ট ভাড়া দেয়া হয়েছে। সেখানে ওষুধ ও কাপড়ের দোকানো পাওয়া গেছে।
নিয়মের বাইরে গিয়ে যারা এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে বলেও জানান তাজিনা সারোয়ার।
এর আগে, এদিন ভবনটিতে অভিযান শুরু করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার। তবে এর আগেই ভবনের রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ ছিলো।
বেইলি রোডের সেই ভবনের ছিলো না ব্যবহার সনদ
এদিকে এই ভবন নিয়ে শুক্রবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ভবনের স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। শুক্রবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সকলের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘PLEASE DON’T USE THIS BUILDING FOR YOUR OWN SAFETY’
মুস্তাফা খালিদ লিখেছেন, প্রতিনিয়ত এই ভবনটি নিয়ে সত্যি উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা ও অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে সমূহ অগ্নিঝুকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য- সেই রিপোর্ট স্বাক্ষর করার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা। যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রইং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক ও ডেভেলপারকে বারবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে।
ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর- ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদের এ-ও জানানো হয় যে, সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।
তিনি আরো লিখেছেন, উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গত মাসে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশন মাস্টারকে এক বার্তায় এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ট ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশন মাস্টারকে বিস্তারিত তথ্য লিখলাম। দেখা যাক কি হয়। যতদূর জানি- এ ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। একজন সচেতন স্থপতি তো বটেই একজন শহরবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই দ্বায়ীত্ব দৃশ্যমান অশনিসংকেতের মোকাবিলা করা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ভবন ও রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্বাআলো/এস