সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এক অষ্টম শ্রেণির হিন্দু ছাত্রী অপহৃত হওয়ার পাঁচ দিন পার হলেও তার কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় ছাত্রদল নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
শ্যামনগরের সিংহড়তলী গ্রামের এক বৃদ্ধ জানান, তার স্ত্রী ও মেয়ে মারা যাওয়ার পর দুই নাতনিকে তিনি লালন-পালন করছেন। তার বড় নাতনি স্থানীয় বণশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি গ্রামের আব্দুল মোড়লের ছেলে তাইজুল ইসলাম (২০) তাকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্যক্ত করে আসছিল। তাইজুল নিজেকে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতো।
গত ২৩ জুন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েটিকে তাইজুল ইসলাম মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ওই দিন বিকেল পর্যন্ত মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করে না পেয়ে পরদিন ২৪ জুন তার দাদা থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাম উল্লেখ না করার শর্তে অভিযোগ গ্রহণ করেন।
পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, তাইজুল ইসলাম ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সরদারের সহায়তায় ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে। তাকে সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিহারীনগর গ্রামের আলম সরদারের বাড়িতে রাখা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় রাইস মিলের সরদার আলম সরদারের সহায়তায় মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরেরও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলা না হওয়ায় র্যাব এ ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এদিকে পুলিশ অভিযুক্তের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। পাঁচ দিন পার হলেও মেয়েটিকে উদ্ধারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতারা দ্বিমতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না, তবে উদ্ধার প্রচেষ্টা চলছে।” উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দেখব।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্যামনগর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির মোল্যার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অপহরণের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও নাবালিকা ছাত্রীটির সন্ধান না মেলায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।