পবিত্র শবেবরাত

সম্পাদকীয়: শবেবরাত অত্যন্ত বরকতময়, মহিমান্বিত ও ফজিলতপূর্ণ রাত। সহীহ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন, তাদের প্রতি রহমত নাযিল করেন, আপন দয়ায় তাদের দোয়া কবুল করেন এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন।

শাবান মাস ও মহিমান্বিত শবেবরাত মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের এক অনন্য সুযোগ।

সুতরাং এ সময়ে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যা আল্লাহর রহমত লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। শবেবরাত নিয়ে সমাজে কিছু বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে।

এসবের মধ্যে রয়েছে: ঘর-বাড়ি, দোকান, মসজিদ ও রাস্তা-ঘাটে আলোকসজ্জা করা, বিনা প্রয়োজনে মোমবাতি কিংবা অন্য কোনো প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা, আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, মাজার ও কবরস্থানে মেলা বসানো ইত্যাদি। এ সকল বিদআত ও কুসংস্কার থেকেও আমাদের বেঁচে থাকা প্রয়োজন।

পবিত্র শবেবরাত আজ

পাঁচ রাতে দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না (অর্থাৎ দোয়া কবুল হয়ে থাকে)। এ পাঁচ রাত হলো, জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবেবরাত ও দুই ঈদের রাত।

শবেবরাতে জাগ্রত থাকার অর্থ হলো, রাতের অধিক সময় আনুগত্যমূলক কাজে ব্যস্ত থাকা। কেউ কেউ বলেন, রাতের কিছু অংশ কুরআন তিলাওয়াত করবে অথবা তিলাওয়াত শুনবে, অথবা হাদিস পাঠ করবে কিংবা পাঠ শুনবে, তাসবীহ-তাহলীল করবে অথবা দরুদ শরীফ পড়বে। কবর জিয়ারত করা ও মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলমানদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা।

শবে বরাতে রাসুলের (স.) বিশেষ আমলের মধ্যে রয়েছে, তিনি এ রাতে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান জিয়ারত করেছেন এবং মৃত মুমিনদের জন্য দোয়া-ইস্তিগফার করেছেন। সুতরাং এ রাতে কবরস্থান জিয়ারত করা, মৃত আত্মীয় স্বজন, পিতা-মাতা ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও তাদের মাগফিরাত কামনা করা উত্তম কাজ।

হাদিস শরীফে আছে, এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন।

শবে বরাতের ফজিলত, যে সকল কাজ করণীয় ও বর্জনীয়

অন্য বর্ণনায় আছে, এ রাতে আল্লাহ পাক এই বলে আহবান করেন, তোমাদের মধ্যে কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কোনো প্রার্থনাকারী কি আছে? আমি তার চাহিদা পূর্ণ করে দেবো।

রাসূল (স.) বলেন, যেই চাইবে তাকে দান করা হবে, কেবল ব্যভিচারী ও মুশরিক ব্যতীত। সুতরাং এ রাতে আল্লাহর দরবারে নিজের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা উচিত। এ রাতের করণীয় আমলের অন্যতম হলো বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করা। রাসুল (স.) দীর্ঘ সিজদা সহকারে এ রাতের দীর্ঘ সময় নামাজে অতিবাহিত করেছেন। শাবান দিনে রোযা রাখা একটি তাৎপর্যপূর্ণ আমল। এ দিনের রোযা বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শাবান মাসের অন্তর্ভূক্ত একটি দিন, যে মাসে রাসুল (স.) অধিক রোযা রাখতেন। শবেবরাত অত্যন্ত বরকতময় ও ফযিলতপূর্ণ।

সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত তার সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। একজন মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে? আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত এ ক্ষমা
তথা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় এবং তার আরো অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় এ রাত ইবাদত বন্দেগিতে কাটানো উচিত।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

বিএসপির সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ (বিএসপি) যশোর এর ২৪৫...

ফের পরীর সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন রাজের

ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি ও নায়ক শরিফুল রাজের...

বেনাপোল কাস্টমসের অভিযানে অবৈধ পণ্যর ট্রাক আটক

মিলন হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: বেনাপোল বন্দরের ৩৫ নম্বর...

কুয়াশায় নিরাপদে গাড়ি চালাতে ৪ নির্দেশনা

ঘন কুয়াশার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। এ অবস্থায়...