আগামীকাল পহেলা ফাল্গুন। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে বসন্তের আগমনী বার্তা। বসন্ত মানে পূর্ণতা। ফুলে ফুলে ভরে উঠছে চারিদিক, গাছে গাছে নতুন পাতা আর কুহু কুহু ধ্বনিতে ডাকছে কোকিল।
শীতের জীর্ণতা আর শুষ্কতাকে পেছনে ফেলে বসন্তের সজীবতাকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মানুষও।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’ এ দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সবমিলিয়ে কদর বেড়েছে ফুলের রাণী গোলাপসহ অন্যদের।
সবার দৃষ্টি এখন ১৪ ফেব্রুয়ারির দিকে। কেনো না, একইদিনে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতী পূজা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ২০ কোটি টাকারও বেশি ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন।
ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষটিকে কী উপহার দেবেন?
তারা বলছেন, প্রাকৃতিক কারণে বছরের শুরুর দিকে অধিকাংশ ফুলের আবাদ হয়। তবে এখন চাষীরা সারা বছরই কমবেশি ফুল চাষ করে থাকেন। এর মধ্যে বছরের শুরুর ২-৩ মাস ভরা মৌসুম। ফেব্রুয়ারির শুরুতে এটি দাঁড়ায় জমজমাট অবস্থায়। পরপর বেশ কয়েকটি দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বাজার দাঁড়ায় কোটি-কোটি টাকায়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ফুলের ব্যবসা করার মাস হচ্ছে ফেব্রুয়ারি। এসময়ে চাহিদাও থাকে বেশি। পাইকারিতেও কিছুটা বেশি দাম দিতে হয়। সেই প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয় ১৪ ও ২১ ফেব্রুয়ারি। এই দুইদিন ঘিরে আগে থেকেই নেয়া হয় বাড়তি প্রস্তুতি। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশি চাহিদা থাকে গোলাপের আর ২১ ফেব্রুয়ারি বেশি চাহিদা থাকে গাঁদা ফুলের। এ ছাড়া অন্য রঙিন ফুলের তোড়া, খোঁপাও বিক্রি হয় প্রচুর। এসব দিনে ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।
ভালোবাসা দিবসে বৃষ্টি হতে পারে
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে- গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, জিপসি, গ্যালেনডোলা ও চন্দ্রমল্লিকা। যশোর ও ঝিনাইদহ থেকে চাষীরা এসব ফুল নিয়ে আসেন। সাভার, মানিকগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার চাষীরাও গোলাপ, রজনীগন্ধা, ছোট-বড় গাঁদা ফুল নিয়ে আসেন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর ফুলের ফলন ভালো হয়েছে। চাহিদাও রয়েছে বেশ। সবমিলিয়ে সামনের ভালোবাসা দিবসের দিন অনেক ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন সবাই। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে অতিরিক্ত ফুলের প্রি-অর্ডারও করে রেখেছেন অনেকে।
দিবস কেন্দ্রিক দাম বাড়িয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে এক বাগান মালিক বলেন, বাগান মালিকের কাছে আমার এক লাখ টাকার গোলাপ অর্ডার দেয়া আছে। তারাই দাম বাড়িয়ে রাখছে। আমরা কী করবো বলুন? পাইকারিতে দাম কম থাকলে খুচরা বাজারে কমিয়ে দিতে পারি। কিন্তু পাইকারি যদি বেশি দামে কিনতে হয় তাহলে তো আমাদের কিছুই করার নেই।
এ ছাড়া রজনীগন্ধার স্টিক মানভেদে ২০-৮০ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৬০-১২০ টাকা, জারবেরা ফুল ৫০-১২০ টাকা, অর্কিড স্টিক ৮০-১০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, ফুলের দাম বাড়তি। এক শিক্ষার্থী বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। সেজন্য ব্যবসায়ীরাও দাম বেশি চাইছেন। কিন্তু এটি ঠিক নয়। তারা সাধারণ মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন।
আরেক ক্রেতা বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে ফুলের দাম তিন গুণ বেশি। ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি হয়ে ওঠে, কারণ এটি ভালোবাসা প্রকাশের উপযুক্ত উপহার। ফুলের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভালোবাসার আনন্দ ও মনোমুগ্ধতা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ঠিক এ সুযোগটি নিচ্ছেন। এটি নিয়ন্ত্রণ বা তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই।
স্বাআলো/এস