বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর উপকূলে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) তৎপরতা নতুন করে ভয় ধরাচ্ছে জেলে ও সীমান্তবর্তী জনগণের মনে। একের পর এক জেলেকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া সীমান্তের লাল দ্বীপসংলগ্ন নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় চারজন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “অপহরণ হওয়া জেলেদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিষয়টি দেখছে।”
এর আগে ৭ এপ্রিল টেকনাফ উপকূল থেকে মাছ ধরতে গিয়ে ৭ জেলে অপহৃত হন। পরে মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন এলাকা থেকে ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে, পরে ইঞ্জিন ও জাল নিয়ে ছেড়ে দেয়। ২৫ এপ্রিল সেন্টমার্টিন থেকে গভীর সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হন ৬ জেলে। তারা এখনো ফেরেননি। ২৯ এপ্রিল টেকনাফের নাজিরপাড়া থেকে ৪ জন জেলে অপহৃত হন। নির্যাতনের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় জেলে আলমগীর হোসেন বলেন, “এখন সাগরে নামা মানেই জীবন হাতে নিয়ে যাওয়া। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নৌকায় উঠে পড়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সদস্য নুরুজ্জামান বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না।”
বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে, টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে আরাকান আর্মির তৎপরতা অনেক সময় বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক সীমারেখার কাছাকাছি সংঘটিত হচ্ছে, যেখানে সক্রিয় নজরদারি কঠিন।
কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রতিটি ঘটনার পর টহল বৃদ্ধি করছি, তবে আন্তর্জাতিক জলসীমা হওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানানোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে।”
সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) কামরুল হাসান বলেন, “মিয়ানমারের ভেতরে চলমান গৃহযুদ্ধ আর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের অভাবেই এমন ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষে এমন অপহরণ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দেশের সার্বভৌমতা ও মানবিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি তুলে ধরা এবং মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে কঠোর বার্তা আদান-প্রদান এখন জরুরি।