যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি ‘আল-উদেইদ’-এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। ইরানি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানায়, এই হামলার নামকরণ করা হয়েছে “বিজয়ের সুসংবাদ” (Annunciation of Victory)।
সোমবার কাতারের রাজধানী দোহার আকাশে ফ্লেয়ার আলো ও জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি এগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ নাকি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাস কাতারে অবস্থানরত নাগরিকদের বাইরে না বের হওয়ার এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেয়। কাতার সরকারও নাগরিক ও ভিজিটরদের নিরাপত্তার জন্য আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে।
আল-উদেইদ ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি, যা প্রায় ১০,০০০ মার্কিন সেনা সদস্যের আবাসস্থল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড -এর ফরওয়ার্ড সদর দপ্তর হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এবং ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের সামরিক অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালীতে উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সামরিক সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির বড় ধাক্কা আসতে পারে।
ইরান জানায়, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে একতরফা আগ্রাসনের পাল্টা জবাব। যদিও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে পরিস্থিতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তা বিশেষজ্ঞ মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদ-এ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কাতারের আকাশে বিরল দৃশ্য দেখা গেছে, যা দেশটির নাগরিকদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা বয়ে আনে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, কাতারের দোহা থেকে নিশ্চিত করেছেন আল জাজিরার সাংবাদিক ওসামা বিন জাভিদ।
তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটিতে লিখেছেন, “অনেক মানুষ বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিল, গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়েছিল।”
বিস্ফোরণের শব্দ কাতারে সাধারণত শোনা যায় না, বরং বছরে কয়েকবার আনন্দঘন উৎসবের সময় আতশবাজি ব্যতীত এমন অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। ফলে এই ঘটনা সাধারণ জনগণের মধ্যে একধরনের শক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জাভিদ আরও লিখেছেন, “কাতারের অধিকাংশ জনগণই প্রবাসী — যারা বিশ্বের নানা দেশ থেকে এখানে কাজ করতে এসেছেন। তাই আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার খবরেও অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়েন, যদিও আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই তা খুলে দেওয়া হবে।”
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এই হামলার আগে হয়তো ইরান পক্ষ থেকে আংশিক ইঙ্গিত বা আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও কাতার সরাসরি লক্ষ্যবস্তু ছিল না, তবুও এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীল দেশগুলোকেও নিরাপত্তাহীনতার ছায়ায় ফেলছে, যা গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক।