আন্তর্জাতিক

মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা, বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | June 24, 2025

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর পর, কাতারের আল উদেইদ এয়ার বেসে ইরানি হামলার পর বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। এই হামলা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এবং কয়েকটি দেশ হামলার নিন্দা জানিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

কাতার:

কাতার হামলাকে “রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং আন্তর্জাতিক আইন” লঙ্ঘন হিসেবে তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, হামলার ফলে দেশটির আকাশসীমা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে তারা দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ইরান:

ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এই হামলার পর একটি বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে তারা জানায়, “এই হামলা কাতারের জনগণের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হয়নি। আমরা কাতারের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারবদ্ধ।”

যুক্তরাষ্ট্র:

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ হামলাটি নিশ্চিত করেছে, তবে জানায় যে, এতে কোনো প্রাণহানি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হামলার ব্যাপারে কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া এখনও প্রকাশ করা হয়নি, তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।

ফ্রান্স:

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই হামলার পর “কূটনৈতিক চেষ্টায় ফিরে যাওয়ার” আহ্বান জানিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য সব পক্ষকে সংযত হতে হবে।

সৌদি আরব:

সৌদি আরব এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতির লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে এবং ইরানের এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা কাতারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে, এ হামলা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।

বাহরাইন:

বাহরাইনও ইরানি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে কাতারের সার্বভৌমত্ব এবং আকাশসীমা লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করেছে। বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা “কাতারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি” জানিয়ে দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার রাতে মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদ-এ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কাতারের আকাশে বিরল দৃশ্য দেখা গেছে, যা দেশটির নাগরিকদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা বয়ে আনে।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, কাতারের দোহা থেকে নিশ্চিত করেছেন আল জাজিরার সাংবাদিক ওসামা বিন জাভিদ।

তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটিতে লিখেছেন,  “অনেক মানুষ বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিল, গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়েছিল।”

বিস্ফোরণের শব্দ কাতারে সাধারণত শোনা যায় না, বরং বছরে কয়েকবার আনন্দঘন উৎসবের সময় আতশবাজি ব্যতীত এমন অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। ফলে এই ঘটনা সাধারণ জনগণের মধ্যে একধরনের শক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

জাভিদ আরও লিখেছেন, “কাতারের অধিকাংশ জনগণই প্রবাসী — যারা বিশ্বের নানা দেশ থেকে এখানে কাজ করতে এসেছেন। তাই আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার খবরেও অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়েন, যদিও আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই তা খুলে দেওয়া হবে।”

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এই হামলার আগে হয়তো ইরান পক্ষ থেকে আংশিক ইঙ্গিত বা আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও কাতার সরাসরি লক্ষ্যবস্তু ছিল না, তবুও এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীল দেশগুলোকেও নিরাপত্তাহীনতার ছায়ায় ফেলছে, যা গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক।

Shadhin Alo