মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে ৫৩ জনের আশ্রয়, গুলিবিদ্ধ ১০ বাংলাদেশি

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার: আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের আরকান রাজ্য। এ অঞ্চলের পূর্ব ও পশ্চিমাংশে বিদ্রোহী এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে চলছে ব্যাপক গোলাগুলি।

সীমান্তের ওপারে থেকে বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে টিকতে না পেরে জীবনরক্ষায় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৫৩ জন সদস্য তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতীয় অধ্যাপক আব্দুল মালিকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

এছাড়াও সীমান্তে আরো ৩০ জনের অধিক বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) তারা বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ছোঁড়া দুটি মর্টারশেল এসে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ইলিয়াস ঘরে ও শফিকুল ইসলাম নামের এক ইউপি সদস্যর বসতবাড়ির উঠানে। গুলিতে আহত হয়েছে প্রবীন্দ্র ধর (৫৫) নামে এক কৃষক। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়েছে বিজিবি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে পুলিশ। তবে এখনো সীমান্ত থেকে লোকজন সরানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

সর্বশেষ রবিবার বিকেল ৪টার দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়েছে গুলি। এসব গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এ ঘটনায় আহত কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও অনেকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের দাবি, মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনা নতুন কিছু নয়। সীমান্তের লোকজন এসব শোনে শোনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে শনিবার থেকে শুরু হওয়া গোলাগুলিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। দুইটি মর্টার শেল বাড়িতে পড়া এবং এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আতঙ্ক ও ভয় ঢুকেছে স্থানীয়দের মনে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ধুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলম বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে যে পরিমাণ গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে এর আগে তেমনটা শোনা যায়নি। তীব্র গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত অনেক বাসিন্দা ইতিমধ্যে গ্রাম ছেড়েছেন। ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পুরো সীমান্ত জুড়ে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারে এখনো প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছি আমরা। এবার গোলাগুলির শব্দের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য এলার্মিং। এখনো সীমান্ত থেকে লোকজন সরানোর কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।

সীমান্তে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মাশরুকী বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও আর প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবির) অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তের ওপারে সংঘাত চলার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে সীমান্তে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

ঝিনাইদহে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত যুবক নিহত

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনের অদূরে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত...

অশ্লীল অডিও-ভিডিও ফাঁস: চৌগাছা থানার ওসি পায়েল ক্লোজড, তদন্ত কমিটি গঠন

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: অশ্লীল অডিও-ভিডিও ফাঁসের পর যশোরের চৌগাছা...

খুলনার সন্ত্রাসী চিংড়ি পলাশ আটক

খুলনার আলোচিত সন্ত্রাসী পলাশ তালুকদার ওর‌ফে চিংড়ি পলাশ‌ ও...

অস্থায়ী পাস নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকতে পারবেন সাংবাদিকরা

অস্থায়ী পাস নিয়ে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) থেকে সাংবাদিকরা সচিবালয়ে...