নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে নিজের পরকীয়ার ঘটনায় বাড়াবাড়ি করায় গৃহবধূ মায়া রানী মণ্ডলকে হত্যা করা হয় বলে আদালতে স্বীকার করেছেন তার স্বামী পরিতোষ কুমার সানা।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে চড়থাপ্পড়ের পরে বাথরুমের মধ্যে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ায় পানির কলে আঘাত লেগে তার মৃত্যু হয়। শুধু তাই নয় তার পড়নের শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে মায়ার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
এছাড়া হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে বাথরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে নিজেই ভেঙ্গেছে ও ঘটনাগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেছে পরিতোষ।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ পরিতোষ সানাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।
আটক পরিতোষ কুমার সানা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বলাবাড়িয়া গ্রামের গোবিন্দ কুমার সানার ছেলে।
এই ঘটনায় মায়া রানীর ভাই সুশান্ত কুমার মণ্ডল কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা করেছেন।
পরিতোষ কুমার সানা জানিয়েছেন, তিনি ঠ্যাংগামারা সাহায্য সংস্থা (টিএমএসএস) এ যশোর উপশহর শাখায় হিসাবরক্ষক পদে চাকরি করেন। ৯ বছর আগে আশাশুনি উপজেলার বেউলা গ্রামের তরুণ মণ্ডলের মেয়ে মায়া রানী কে সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন পরিতোষ সানা। স্ত্রী মায়া রানী ও সাত বছর বয়সের মেয়ে সুরভী রানীকে নিয়ে উপশহরের নওশের আলীর ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। এক বছর যাবৎ পরিতোষ গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। পাশাপাশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। যে কারণে স্ত্রী মায়ার সাথে তার প্রায়ই ঝগড়া এমন কি মারধর করতেন পরিতোষ। বিষয় মায়া রানী তার ভাই সুশান্তকে জানান।
সুশান্ত বিষয়টি নিয়ে পরিতোষকে পরকীয়ার পথ পরিহার করে সংসার করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে পরিতোষ আরো বেশি ক্ষীপ্ত হয়ে মায়ার উপরে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। দুই মাস পূর্বে মায়াকে মারধর করে পিতার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয় পরিতোষ। এই ঘটনায় পারিবারিকভাবে সালিশ মীমাংসা করে আবারো মায়াকে পরিতোষের সংসারে পাঠিয়ে দেন তার ভাই। কিন্তু পরকীয়ার পথ পরিহার না করায় তাদের মধ্যে অশান্তি লেগেই আছে। ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে বাসায় আসেন পরিতোষ। এসময় মেয়েসহ পরিতোষকে মায়ার পিতার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলেন।
যশোরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, আহত ৩০
কিন্তু তার অফিসে ঢাকা থেকে অডিট আসছে বলে যেতে রাজি নয় পরিতোষ। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এরই মধ্যে মায়া বাথরুমে যান। সেখানে গিয়ে মায়াকে একটা থাপ্পড় মারেন পরিতোষ। এসময় মায়া স্টিলের পানির ট্যাবের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যান। এরপরে পরিতোষ তার বিছানায় শুয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে বাথরুমে গিয়ে দেখেন মায়া একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। এসময় মায়ার মৃত্যুটি নিশ্চিত করতে তার পড়নের শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে পরিতোষ।
এভাবে রাত শেষে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার অফিসের ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামকে মোবাইল করে জানান তার স্ত্রী বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারা গেছে। ম্যানেজারের পরামর্শে মায়ার লাশ পরিতোষের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে বিভিন্ন লোকের চাপে পড়ে আবার লাশটি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পরে হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে এসে হাসপাতাল মর্গে বোন মায়ার লাশ শনাক্ত করেন তার ভাই সুশান্ত কুমার মণ্ডল। এই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মামলা করা হলে এদিনই আদালতে সোপর্দ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হেলাল সরদার।
সোমবার হাসপাতালের চিকিৎসক বাবলু কিশোর বিশ্বাস নিহত মায়ার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার ভাই সুশান্ত কুমার বাড়িতে নিয়ে রওনা করেন।
স্বাআলো/এস