মতামত

যুদ্ধের অপেক্ষায় ট্রাম্প: রাজনীতি না কৌশল?

কামরুল ইসলাম বিপ্লব কামরুল ইসলাম বিপ্লব | June 18, 2025

মধ্যপ্রাচ্যে আবারও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। ইসরায়েল ও ইরান টানা পাঁচ দিন ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে রাষ্ট্রীয় টিভি ভবন, সামরিক ঘাঁটি, বেসামরিক স্থাপনা—এমনকি একটি মোসাদ অফিস। এমন উত্তপ্ত মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, “আমরা এখন ইরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই বক্তব্য কি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, না কি ভবিষ্যৎ হস্তক্ষেপের সূক্ষ্ম রাজনৈতিক কৌশল?

কৌশলী চুপ থাকা

আল জাজিরা আরবির বিশ্লেষক লিক্বা মাকির মতে, ট্রাম্পের এই দ্বিধাজনক অবস্থান কোনো অনিচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি ইচ্ছাকৃত কৌশল। ট্রাম্প সরাসরি এখনই যুদ্ধ শুরু করছেন না। বরং তিনি সেই মুহূর্তের অপেক্ষায়, যখন ইরান সামরিকভাবে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বা মিত্রদের ওপর পাল্টা আঘাত হানার সক্ষমতা হারাবে।

এমন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করলে যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব ট্রাম্পের ঝুলিতে যাবে—বিশ্লেষকের মতে, সেটাই মূল উদ্দেশ্য।

মার্কিন রাজনীতিতে বিভক্তি

যদিও ট্রাম্প যুদ্ধ নিয়ে সরব, তার ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেই ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। কংগ্রেসের ডানপন্থী সদস্য মার্জোরি টেইলর গ্রিন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমেরিকার জনগণের কষ্টার্জিত করের অর্থ দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন নিরাপত্তা, শিক্ষা, আবাসনের জন্য বরাদ্দ হওয়া উচিত—আরেকটি বিদেশি যুদ্ধে নয়।”

এই বক্তব্য শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, একইসাথে মার্কিন জনগণের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবকেও সামনে নিয়ে আসে। একাধিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকান জনগণের বড় অংশ চায় সরকার ঘরোয়া সমস্যা সমাধানে বেশি মনোযোগ দিক।

গণতন্ত্রের মুখোমুখি বিভ্রম

আজকের বিশ্ব রাজনীতিতে যুদ্ধ আর কূটনীতি যে অনেক সময় ‘শো’র মতো পরিচালিত হয়, তার আরেকটি প্রতিচ্ছবি হচ্ছে এই পরিস্থিতি।

বিশ্ব এখন চায় সত্যিকারের শান্তি, শোষণহীন কূটনৈতিক সমাধান, এবং রাজনৈতিক অভিনেতাদের পক্ষ থেকে মানবিকতা ও দূরদর্শিতা। কিন্তু যখন রাষ্ট্রনেতারা যুদ্ধকে ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে, তখন কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়—পরাজিত হয় গণতন্ত্রও।

লেখক: মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক