জাতীয়

‘রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে’

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | June 20, 2025

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেছেন যে, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে দ্রুতই এই সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকিতে পরিণত হতে পারে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়ন ঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিগত আট বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে ১২ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই সংকট এখন আর কেবল মানবিক বিষয় নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং ক্রমবর্ধমানভাবে একটি নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। তিনি নিজ দেশ মিয়ানমারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও অধিকারসহকারে তাদের স্বভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহ্বান জানান।

আলোচনায় তারুণ্যের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে তরুণরা বারবার পরিবর্তনের অগ্রভাগে থেকেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লবসহ সকল আন্দোলনে অন্যায় এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ সর্বদাই সোচ্চার ছিল।

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি!

তিনি আরো সতর্ক করে বলেন, তরুণরা যদি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তারা সহজেই চরমপন্থার শিকার হতে পারে। এছাড়া, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও উন্নয়ন ঘাটতি যদি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে, তাহলে এক পর্যায়ে তা সহিংসতা ও অস্থিরতার রূপ নিতে পারে।

বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তিন শূন্য নীতি’র কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল একটি ভবিষ্যৎ চাই যেখানে থাকবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ।” এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে উন্নয়ন ও শান্তি বিনির্মাণ প্রচেষ্টাকে একসূত্রে যুক্ত করতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ECOSOC) এবং সাম্প্রতিককালে গঠিত পিসবিল্ডিং কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো বাস্তবভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ‘সামাজিক ব্যবসা’ ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রবর্তিত এই মডেল দারিদ্র্য বিমোচন ও সংঘাত প্রতিরোধে একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে।

একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

নিরাপত্তা পরিষদের এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও সুইডেন, উরুগুয়ে ও পূর্ব তিমুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জার্মানির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo