লন্ডন বৈঠকে ‘ইগনোর’

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বর্জন জামায়াতের

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | June 17, 2025

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার অসমাপ্ত আলোচনায় আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় জামায়াতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়নি।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শুরু হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের এ আলোচনা। আলোচনায় বিএনপি, নাগরিক ঐক্য, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তবে আলোচনার শুরু থেকেই অনুপস্থিত ছিল জামায়াতে ইসলামী।

দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সংবাদমাধ্যমকে বলেন,

“লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণায় জামায়াতকে ইগনোর করা হয়েছে। এতে আমরা মনে করছি, আমাদের দলকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। সেজন্য আমরা এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছি না।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের দুই ঘণ্টা পর জামায়াতকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হয় আলোচনায় যোগ দিতে। তবে দলটি সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঈদের আগে, গত ৩ জুন। সেই আলোচনায় জামায়াতের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ। ওই দিন সকালবেলা জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন থাকায় তারা বিরতির পর বৈঠকে যোগ দেন।

আজকের বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংবিধান, সংসদীয় সংস্কৃতি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত এসব বিষয়ের আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তি তৈরির লক্ষ্যে কাজ চলছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যান্য বিশিষ্ট সদস্যগণ। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিভিন্ন প্রস্তাব, পর্যালোচনা ও মতামত তুলে ধরেন।

১৭, ১৮ ও ১৯ জুন—এই তিন দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী কাঠামো ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির রূপরেখা তৈরিতে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।

তবে জামায়াতের এই বর্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক, ভবিষ্যৎ জোট রাজনীতি এবং জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার অন্তর্গত অংশীদারিত্বের প্রশ্নে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

জামায়াতের এই অবস্থান কেবল একটি সংক্ষিপ্ত বয়কট নয়; এটি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মেরুকরণে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে। জামায়াত বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা, বা এটি কৌশলগত অবস্থান বদলের অংশ, তা এখনই বলা না গেলেও ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।