জাতীয়

সংকটে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা

ঢাকা অফিস | June 27, 2025

বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বৈশ্বিক যুদ্ধ, সরবরাহ শৃঙ্খল বিপর্যয় অথবা আন্তর্জাতিক বাজারে তেল সংকটের মতো পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সঞ্চয় না থাকায় মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থাগুলোর (IEA) প্রমিত মান অনুযায়ী, আমদানিনির্ভর দেশগুলোকে অন্তত ৯০ দিনের জ্বালানি তেল মজুত রাখতে হয়। অথচ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য বলছে, বর্তমানে ডিজেল মজুত রয়েছে মাত্র ২৭ দিনের জন্য, অকটেন ৭ দিন, পেট্রোল ৮ দিন ও ফার্নেস অয়েল ২৮ দিনের জন্য।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, “যেকোনো বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা বা পরিবহন বিলম্বে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প-কারখানা এবং কৃষিখাত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

বিপিসি বলছে, বর্তমানে দেশের বার্ষিক জ্বালানি চাহিদা প্রায় ৭২ লাখ টন, যার ৯২ শতাংশই আমদানি নির্ভর। অথচ বর্তমানে সর্বোচ্চ মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৩৩০ টন—যা মোট চাহিদার মাত্র ২২ শতাংশ।

১৯৭১ সালে দেশের বার্ষিক চাহিদা ছিল মাত্র ১১ লাখ টন, যা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ২০৩০ সালে গিয়ে ৯১ লাখ টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মজুত অবকাঠামো সে তুলনায় বাড়ছে না।

স্টোরেজ স্বল্পতার কারণে প্রায়ই বিদেশ থেকে আনা তেলবাহী জাহাজ বন্দরে পড়ে থাকে, তেল নামানো যায় না। এতে বিপিসিকে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা।
বিপিসির বাণিজ্য ও অপারেশন্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মণি লাল দাশ বলেন, “স্টোরেজ ক্যাপাসিটি কম থাকায় অনেক সময় জাহাজ বসিয়ে রাখতে হয়। এতে আমাদের মোটা অঙ্কের ডেমারেজ (জরিমানা) গুনতে হয়।”

বিষয়পরিমাণ
বার্ষিক চাহিদা৭২ লাখ টন (২০২৪-২৫)
মোট মজুত সক্ষমতা১৫.৮৪ লাখ টন
ডিজেল মজুত২৭ দিনের জন্য
অকটেন মজুত৭ দিনের জন্য
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড৯০ দিনের মজুত আবশ্যক
ডিজেলের ব্যবহারদৈনিক গড়ে ১১,৩৪৭ টন

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিপিসি সরবরাহ করেছে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার টন পেট্রোলিয়াম জ্বালানি। এর মধ্যে ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭৯ টন (প্রায় ৬৩%)। অথচ গত ৫ বছরে ডিজেলের স্টোরেজ সক্ষমতা উল্টো কমেছে ২৩ হাজার ৭২৯ টন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম অভিযোগ করেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ মজুত ক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী নন। কারণ সরকারি অবকাঠামো বাড়ালে ব্যক্তিগতভাবে তাদের কোনো লাভ হয় না। বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ট্যাংক ভাড়া নিলে তারা কমিশন পান।”

তিনি আরও বলেন, “তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন, যাতে জনগণের পক্ষ থেকেই দাবি উঠে—বেসরকারি ট্যাংক ভাড়া নিতে হবে। তখন সরকার ‘জরুরি পরিস্থিতি’ বলে তাদের অনুমোদন দিয়ে দেবে।”

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো এখন অনেকটাই পুরোনো। ফলে নতুন আন্তর্জাতিক মানের ট্যাংক নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমানে দেখানো মজুতের মধ্যেও প্রায় ১০ শতাংশ ডেড স্টক থাকে, যা ব্যবহারযোগ্য নয়। বাস্তবে কার্যকর মজুত আরও কম।”

বর্তমানে দেশে ২৭টি ডিপোতে মোট ১৫.৮৪ লাখ টনের তেল মজুত করার সুবিধা থাকলেও সেটি কার্যকর নয়। বর্তমানে পতেঙ্গায় পদ্মা অয়েলে দুটি, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে দুটি করে মোট ৮০ হাজার টনের নতুন ট্যাংক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে কাজ চলছে ধীর গতিতে।

Shadhin Alo