ঈদে জরুরি সেবায় থাকছেন ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী

ঢাকা অফিস: প্রতিবারের মতো এবার ঈদের ছুটিতে হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

অধিদফতর বলছে, রবিবার (১৬ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল আজহার ছুটি। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি যাচ্ছেন ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। আর বাকি ৪০ শতাংশ ছুটি চলাকালীন চিকিৎসাসেবা নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। এ সময়ে প্রতিদিন তদারকি করবেন ইউনিট প্রধান।

অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ৬৫৪টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ৩০ হাজার ২৭৩ জন চিকিৎসকসহ ৭৮ হাজার ৩০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী কর্মরত রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ঈদে জরুরি সেবা নিশ্চিতে কর্মস্থলে থাকবেন।

নিষিদ্ধ হ্যালোসিন পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এ বিষয়ে কথা হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মঈনুল আহসান বলেন, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ঈদে কর্মরত থাকবেন। এ বিষয়ে হাসাপাতালগুলোকে জরুরি রোস্টার করতে বলা হয়েছে।

শ্যামলী ২৫০ শয্যা টিবি ও অ্যাজমা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ঈদের ছুটিতেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকে। দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে হাসপাতালে সহকর্মী-রোগীদের সঙ্গে আমার ঈদে ছুটির সময়টুকু কাটে। তিনি বলেন, বছরের বেশিরভাগ সময় রোগী ও সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটে। তারাও পরিবারের অংশ। সবমিলিয়ে ঈদ আনন্দের কোনো কমতি হয় না। সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। পরে রোগীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। এভাবেই কেটে যায় ঈদ।

বাগেরহাটে মানসিক স্বাস্থ্য মনিটরিং কমিটি অধিপরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান বলেন, জরুরি চিকিৎসাসেবা যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়কে রোস্টার করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ঈদের ছুটিতে যাবেন।

ডা. কাজী শামীম উজ্জামান বলেন, জরুরি পরীক্ষা বা অপারেশন করা নিয়েও কোনো সমস্যা নেই। ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস চালু থাকবে। যদি বড় কোনো সমস্যাও হয় আমরা চিকিৎসা দিতে পারবো। আমিসহ সিনিয়র অধ্যাপকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, আমাদের জরুরি, মেডিসিন, সার্জারিসহ প্রতিটি বিভাগে ছুটির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে রোস্টার করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে সবার খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের সময় ভর্তি রোগীর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া খুব বেশি চাপ তৈরি হয় না।

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করুন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অন্যদিকে, ঈদুল আজহার ছুটিতে হাসপাতালে জরুরি সেবা নিশ্চিতে ১৪ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেগুলো হলো:

১. ছুটিকালীন কর্মস্থলে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া যেতে পারে।

২. প্রতিষ্ঠান প্রধান নিরবচ্ছিন্ন জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অনুকূলিতভাবে ছুটি মঞ্জুর করবেন।

. সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করে শুধু ঈদের ছুটিকালীন নিজ জেলার মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনবল সমন্বয় করতে পারবেন।

৪. জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

৫. জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমারজেন্সি ওটি সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।

৬. অন্তঃবিভাগে ইউনিট প্রধানরা প্রতিদিন তদারকি করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জরুরি ল্যাব, এক্স-রে সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।

৭. ছুটি শুরুর আগেই ছুটিকালীন সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, আই ডি ফ্লুয়িড কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুত ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে স্টোর কিপার অথবা ছুটিকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ অবশ্যই নিজ জেলা ও উপজেলায় অবস্থান করবেন।

৮. অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।

৯. ছুটিকালীন হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আগামপত্র দিতে হবে।

১০. প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা ছুটিকালীন সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করবেন এবং ঈদের দিন কুশল বিনিময় করবেন।

২৪ ঘণ্টা সার্ভিস চালু থাকবে। জরুরি পরীক্ষা বা অপারেশন করা নিয়েও কোনো সমস্যা নেই। সিনিয়র অধ্যাপকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন

১১. প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি নিলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন এবং দায়িত্ব গ্রহণকারী কর্মকার্তা সব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

১২. প্রতিষ্ঠান প্রধান ঈদের দিন রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন তদারকি করবেন এবং রোগীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

১৩. পশুর হাটের নিকটবর্তী স্বাস্থ্য স্থাপনাগুলোতে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে।

১৪. জাতীয় ঈদগা ও অন্য জেলা ঈদগাগুলোতে (চাহিদা অনুযায়ী) মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করবে।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

পটুয়াখালীতে বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: মহান ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে...

কেউ যেনো মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে না পারে: জামায়াতে আমির

ছাত্রদের স্যালুট জানানোর ইচ্ছা পোষণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর...

নড়াইলে ইউপি সদস্যকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা

নড়াইলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারী (৫০) ইউপি সদস্যের মৃত্যু...

ফের বাজার থেকে উধাও সয়াবিন তেল

সয়াবিনের সংকট কাটাতে চলতি মাসের শুরুতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে...