নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসীর মেয়ে ও কুলবাড়িয়া বিকেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ১৪ বছর বয়সের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে গ্রাম্য মাতববরদের দিয়ে ৩০ হাজার টাকায় মীমাংসার চেষ্টা করেও রেহায় পায়নি ধর্ষক মিজানুর রহমান (৪০)।
অবশেষে থানার পুলিশের চৌকস অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিএম কামাল হোসেন ভূঁইয়া নেতৃত্বে বাঁকড়া তদন্ত কেন্দ্রের টুআইসি এসআই জিয়াউর রহমানসহ একটি টিম সোমবার রাতের প্রথম প্রহরে অভিযান পরিচালানা করে ধর্ষক মিজানুর রহমানকে আটক করেন।
ধর্ষক মিজানুর রহমান কুমড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মিজানুর রহমান ও বাদীর বাড়ি পাশাপাশি এবং গ্রাম্য চাচা শ্বশুর। কারণে অকারণে বাদী ও আসামিদের বাড়ি যাতায়াত ছিলো। বাদীর ১৪ বছরের কিশোরী স্কুলের যাওয়া আশার সময় আসামি বাদীর মেয়েকে বিভিন্ন সময় ইয়ারকির ছলে কিছু কটু কথা বলিত, যাহা বাদীর মেয়ে বাড়িতে এসে বাদীর সাথে বলিত। কিন্তু আসামি বাদীর মেয়ের প্রতিবেশী দাদা হয় বলে বাদী কিছু মনে করতো না। আসামিদের পুকুরে বাদীর মেয়ে ও তার চাচাতো বোনসহ গোসল করতে গেলে আসামি পৃথকভাবে বাদীর মেয়েকে প্রলোভন দিয়ে তার ঘরে ডাকতো এবং কুরুচিপূর্ণ কথা বার্তা বলতো।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বাদী তার বাড়িতে থাকা অবস্থায় বাদীর মেয়ে ও তার চাচাতো বোন আসামিদের পুকুরে গোসল করতে গেলে ঐ সময় আসামির স্ত্রী ও ছেলে বাড়িতে না থাকায় সুযোগে আসামি কৌশলে বাদীর মেয়েকে তার ঘর ঝাড় দিয়ে দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে আসামির শয়ন কক্ষে নিয়ে যায় এবং শয়ন কক্ষের খাটের উপর বসিয়ে আসামি বাদীর মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এসময় বাদীর মেয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে গেলে আসামির খাটের নিচে থাকা ছুরি বের করে বাদীর মেয়েকে ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে আসামি মিজানুর রহমান বাদীর মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ছুরি দেখিয়ে কাউকে কোনো কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখান। বাদীর মেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে গোসল না করেই কান্না করতে করতে বাড়িতে গিয়ে বাদীর সাথে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান। ঘটনার বিষয়ে বাদী তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জানান। বাদীর শ্বশুর-শাশুড়ি ঘটনার বিষয়ে আসামির স্ত্রীকে জানান। তখন আসামির স্ত্রী বাদীদের চুপ থাকার জন্য অনুরোধ করেন। বাদীসহ বাদীর পরিবারের লোকজন মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চুপ থাকে। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কানাঘুষির একপর্যায়ে গ্রামের কিছু লোকের মধ্যে জানাজানি হলে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা সমন্বয়ে বিষয়টি নিয়ে আসামির বাড়িতে শালিস বৈঠকে বসে। আসামি উক্ত শালিস বৈঠকে তার দোষ স্বীকার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে সম্মতি হয়, যাহা বাদীরা মেনে নেই না। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১২, তারিখ—১০/০৬/২০২৪।
থানার অফিসার ইনচার্জ বিএম কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক আমিসহ আমার টিম অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমকে উদ্ধার করে ও আসামিকে আটক করে থানাতে নিয়ে আসি। আসামির বিরুদ্ধে ৯(১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩, জোরপূর্বক ধর্ষণ করার অপরাধে মামলা রুজি করে আসামিকে বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বাআলো/এস