চৌগাছায় পটলের কেজি ৫ টাকা!

আজিজুর রহমান, চৌগাছা (যশোর): যশোরের চৌগাছায় শুক্রবার (২১ জুন) পটল বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা কেজিতে! ঈদের ছুটি শেষে ব্যাপারি (পাইকারি ক্রেতা, যারা ঢাকা-চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করেন) কম আসায় এবং বাজারে চাহিদা কম থাকায় পটলের দামের এই পড়তি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এর আগে গত ৩১ মে চৌগাছা বড় কাঁচাবাজারে পটল ৪ টাকা কেজি দরে পটল বিক্রি হয়েছিলো।
তবে পাইকারি বাজারের মধ্যে অবস্থিত খুচরা বাজারে একই পটল ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং ২০০ মিটার দুরের চৌগাছা খুচরা কাঁচাবাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শুক্রবার (২১ জুন) চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের বড় কাঁচাবাজার এবং চৌগাছা খুচরা কাঁচাবাজারে গেলে এই দামে পটল বিক্রি হতে দেখা যায়।
চৌগাছায় বাওড় দখলের চেষ্টা, চাঁদা না দেয়ায় মৎস্যজীবীদের প্রাণনাশের হুমকি
বাজারের আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার চৌগাছা বড় কাঁচাবাজারে বিপুল পরিমান পটল বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকরা। সুযোগ বুঝে এবং ঈদের পরে বাজারে (ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালি মোকামে) চাহিদা কম থাকার দোহাই দিয়ে বাইরের ব্যাপারিরা (চৌগাছা থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালি, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি বিক্রেতা) পটল কম মূল্যে ক্রয় করতে থাকেন। সকালের দিকে পটোল ১০-১১ টাকা কেজি বিক্রি হয়, সেই পটলই জুম্মার আগে ও পরে ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে কিনতে থাকেন ব্যাপারিরা। পচনশীল কাঁচা সবজি হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপারিদের দেয়া দামে বিক্রয় করতে বাধ্য হন।
তারা জানান, শুক্রবার চৌগাছা বড় কাঁচা বাজারে প্রায় ১০০ ট্রাক পটল পাইকারি বিক্রি হয়েছে। যার এক ট্রাকে প্রায় ৩৫০ মণ পটল লোড হয়।
চৌগাছা বড় কাঁচাবাজারের আড়ৎদার মুকুল হোসেন জানান, সারাদিনে আমার আড়তে চার হাজার ১৩৩ কেজি পটল বিক্রি হয়েছে। ১১ টাকা থেকে বিক্রি শুরু করে শেষে ৯ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছি।
মুকুল হোসেন বলেন, দুপুরের দিকে যারা পটল এনেছেন তারা খুব ভালো মানের পটলও ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ঈদের পর বাজারে চাহিদা কম থাকায় ব্যাপারিরা কম দামে পটল ক্রয় করেছেন।
চৌগাছায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু
বাজার দরের পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাপারীদের চাহিদামতো আগেই ক্রয় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে ভালো পটলও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন চাষীরা।
তিনি বলেন, তবে আজকের বাজারে ইরিকচুর চাহিদা ও দাম বেশি ছিলো। সারাদিনে ইরিকচু (মুখিকচু/সারোকচু) এক হাজার ৮৭২ কেজি বিক্রি করেছি। সর্বনিম্ন ৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চৌগাছার হাজরাখানা গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে পটল চাষ করেছেন। শুক্রবার তিনি ১০ কাঠা জমির পটল তুলে বাজারে নিয়ে আসেন। তিনি ৮ মণ পটল ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। ফজলুর রহমান বড় বাজারের আড়ৎদার আব্দুল মান্নানের আড়তে পটল বিক্রি করেন।
আড়ৎদার আব্দুল মান্নান বলেন, প্রথম দিকে ১০-১১ টাকা করে বিক্রি করেছি। তবে যারা পরে এনেছেন তারা ৫-৬টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের এ সময়ে কচু, ঝিঙে, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজি বাজারে এসে যাওয়ায় পটোলের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। তবে এতো কম না। ঈদের পর বাজারের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় বাজারে পটলের দাম কমেছে।
চৌগাছা থেকে চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে পটোল বিক্রেতা (ব্যাপারি) নারায়ন চন্দ্র বলেন, মার্কেটে পটোলের চাহিদা কিছুটা কম, এজন্য পটলের দাম কম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুবাশ্বির হুসাইন বলেন, চৌগাছায় চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমান পটোলের চাষ হয়েছে। ঈদের পর বাজারে চাহিদা কম থাকায় হঠাৎ করে পটোলের দাম কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। চাষীরা যেনো ন্যায্যমূল্য পায় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
স্বাআলো/এস