নিহত পুলিশ সদস্য সুমনের বাড়িতে শোকের মাতম

আজাদুল হক, বাগেরহাট: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে কথিত আন্দোলনকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামীর (৩৫) বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কিসমত মালিপাটন গ্রামে। সুমন ঘরামী ওই গ্রামের বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শুশীল ঘরামীর ছেলে। তিনি খুলনা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন।
খুলনায় শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে কর্তব্যকালীন সুমন ঘরামী নিহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সুমনের বাড়ীতে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে ওই বাড়ীতে শত শত মানুষ যাচ্ছেন শোক সন্তপ্ত পরিবার কে সান্তনা দিতে।
সংশ্লিষ্ট গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা জানান, সুমন ঘরামী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তার চার বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শুশীল ঘরামী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। মা গীতা রানী ও স্ত্রী পাগলীনীর ন্যায় আচরণ করছেন। তার মৃত্যুর সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শনিবার সকাল থেকে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ওই বাড়ীতে অপেক্ষা করছে লাশের জন্য। তবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ছেলের মৃত্যুর কথা জানেন না সুমনের অসুস্থ পিতা।
বাগেরহাটে বিষপানে নারীর আত্মহত্যা
প্রতিবেশীরা জানান, তিনবার স্ট্রোক করেছেন তিনি। শারীরিকভাবে বেশি সুস্থ না। তাই কেউ থাকে ছেলের মৃত্যুর খবর বলেননি। সুমনের মা গীতা রাণী শুক্রবার রাতেই জেনেছেন ছেলের মৃত্যুর খবর। সেই থেকে বিলাপ করছেন তিনি। তাকে পাশের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে নিয়ে রাখা হয়েছে। স্বজনরা কিছুতেই শান্তনা দিতে পারছেন না তাকে।
শনিবার বিকেলে সুমনের বাড়ীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুমনের মা গীতা রাণীকে তাঁর বোন, মেয়েসহ অন্য স্বজনরা সান্তনা দেবার চেষ্টা করছেন। তবে কিছুতেই থামছে না তার কান্না বিলাপ। বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী স্থানীয় হরি মন্দিরের সামনে অপেক্ষায় সবার প্রিয় সুমনের জন্য। এই মন্দিরের পেছনেই পুলিশ কনস্টেবল সুমনের ঘর। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর নিবাসের ঘর পেয়েছেন সুমনের পিতা।
প্রতিবেশী ও সুমনের বন্ধু সমর কৃষ্ণ ঘরামী বলেন, আমরা একসাথে এসএসসি পাস করছি। এরপর সে পিরোজপুরের বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এর কিছুদিন পর পুলিশে যোগদান করেন সুমন কুমার ঘরামী। সুমনরা এক ভাই, এক বোন।
বাগেরহাটে তিনজন শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেফতার
তাঁর বড় বোন সুমনা ঘরামীর ছেলে অর্পন সমাদ্দার বলেন, আমার মামা ভাত খাইতে বসছিলো। তখন ফোন আসছে, খাইতেও পারেনি। চলে গেছে এই শুনছি। আমার মামা আমাকে খুব ভালোবাসতো। একটা ছোট বোন আমার (মামাতো বোন)। ও তো কিছু বুঝে না। সুমনের ভাগ্নে অর্পন সমাদ্দার কচুয়ার মোবাইদুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্র। নিহত সুমন তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা ঘরামীকে নিয়ে খুলনার দোলখোলা এলাকায় ভাড়া বাড়ীতে থাকতেন।
তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (সোনাডাঙ্গা জোন) দেহরক্ষী ছিলেন। হিন্দুরীতি মেনে তাকে নিজ বাড়ীর বসত ঘরের সামনে সমাহিত করা হবে বলে পরিবার থেকে বলা হয়।
কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসীন হোসেন জানান, লাশের ময়না তদন্তসহ বিভাগীয় নিয়মনীতি মেনে রাতেই নিহত সুমনের মরদেহ বাড়িতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সে ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
স্বাআলো/এস