৩০০ আসনেই নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জামায়াত

দেশের প্রধান ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে দলটি ৭৯ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে চায়। যদিও এখনো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তার আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

তবে আগামী নির্বাচনে ইসলামী ও অন্য ছোট দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি সমঝোতা করে ভোটের লড়াইয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে জামায়াতের। এমনকি ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে প্রয়োজনে সব দলকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনেরও চিন্তা রয়েছে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থীর সংখ্যাও পরিবর্তন হতে পারে।

দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চায় জামায়াত। এজন্য সব আসনে নিজেদের প্রার্থী প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। এ পর্যন্ত তারা ৭৯ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রের গাইডলাইন অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবেও বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে।

এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতারা সারাদেশ সফর করছেন।

তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জামায়াত এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ইলেকশন এখনো অনেক দূর। ইলেকশন কাছে এলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। এখন যেটা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা প্রাথমিক সিলেকশন। তখন যাদের নমিনেশন দেয়া হবে, তারাই প্রার্থী হবে।

দলীয় সূত্রমতে, জামায়াতের সব সভা-সমাবেশেই প্রাধান্য পাচ্ছে আগামী নির্বাচন ও সরকার গঠনের বিষয়টি। ফ্যাসিবাদ ও চাঁদাবাজরা যাতে আর ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছেন নেতারা। একইসঙ্গে তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিলে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক দেশ গঠনেরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি এক সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান আগামী নির্বাচনে সৎ মানুষকে সমর্থন দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, যদি তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাহলে সুশাসন, সুবিচার ও সুষম উন্নয়ন পাবেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো- একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ।

এ কাজের জন্য জামায়াত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যবিহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় নির্বাচন দেয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির মুখপাত্র, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই স্পষ্ট করেছে যে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচন চাই। তার আগে অপরিহার্য কিছু বিষয়ে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে তা অর্থবহ হবে না; এটা আগের নির্বাচনি কর্মকাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

তিনি বলেন, জামায়াত চায় নির্বাচনবিহীন যে সংস্কৃতি ফ্যাসিস্টরা তৈরি করেছিল এবং ভোটারদের ছাড়াই নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা দখলের যে দৃশ্যের অবতারণা করেছিল, তা যেন আর কেউ চর্চা করতে না পারে। সেজন্য নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার, প্রশাসনের কিছু অংশ এবং বিচার বিভাগের সংস্কার করতে হবে। এ সংস্কারগুলো হলেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবেÑ এটাই হলো জামায়াতের চাওয়া।
ভোটের জন্য দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে জামায়াতের এই নেতা বলেন, প্রথমত জামায়াত ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সঙ্গে এটাও বিবেচনায় নিয়েছে যে, অতীতে যেহেতু জামায়াত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছে, এবারও যাতে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে।

তবে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঐক্য বজায় রাখতে বর্তমানে বিএনপিসহ সব দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ এবং সম্পর্ক বহাল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্প্রতি দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সামনে নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা-পথ খোলামেলা। একটি দল এককভাবে, জোটগতভাবে অথবা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। এ তিনটি অপশন সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি। একক অপশনে এখনো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে আমাদের প্রস্তুতি সর্বভাবেই আছে।

এছাড়া আগামীতে বিজয়ী হয়ে সুযোগ পেলে দেশপ্রেমিক সব দলকে সঙ্গে নিয়েই জামায়াত সরকার গঠনের পক্ষে বলে মন্তব্য করেন দলটির আমির।

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সেক্ষেত্রে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি সমঝোতার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, নির্বাচনি জোট করলে নেতৃত্ব নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। এজন্য আসনভিত্তিক সমঝোতার চেষ্টা চলছে। ইসলামী আন্দোলন চায়, ইসলামপন্থি, দেশ ও মানবতার পক্ষের শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করা।

ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসলামকেই রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চাই আমরা। এজন্য এবার সহজ শর্ত দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গেও তাদের সমঝোতার সম্ভাবনা আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে ১৯টি, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে, ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী), বান্দরবান-৩০০ নম্বর আসনে, পটুয়াখালীর চারটি, পিরোজপুরে তিনটি, ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি, শরীয়তপুরের তিনটি, নাটোরের চারটি, ফরিদপুরের সব আসনে, দিনাজপুরের ছয়টি, কিশোরগঞ্জে পাঁচটি, ঝিনাইদহের সব আসনে, চুয়াডাঙ্গা-১, সিরাজগঞ্জের পাঁচটি ও সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার আসনগুলোর জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তা জানানো হবে বলে জানা গেছে।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

শেখ রেহানার স্বামী-দেবরসহ ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঢাকা অফিস: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ...

বজ্রপাতের সময় কী করবেন, কী করবেন না

বৈশাখ মাস শুরু হতেই বাংলাদেশে বেড়েছে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের...

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব পলিটেকনিক

ঢাকা অফিস: ছয় দফা দাবি পূরণের সুস্পষ্ট রূপরেখা না...

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: তৃতীয় দিনে ১০ জনের সাক্ষ্য

লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা: দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী মাগুরার শিশু...