ঢাকা অফিস: আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে দিনটি জাতীয় ছুটির দিন।
এ বছর বাংলাদেশে মে দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’। এই মূলভাবনাকে ধারণ করে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই সম্পর্ক দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন, “শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক, আর তাদের যৌথ প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে।” তিনি দেশের পোশাক, কৃষি, শিল্পসহ সকল খাতের উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিক উভয়ের অবদান স্বীকার করেন এবং ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান। ড. ইউনূস আরও বলেন, এই ঐক্য বজায় থাকলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে।
কুয়েটে নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে শ্রম অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য গত ১৭ নভেম্বর একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে গঠিত ১০ সদস্যের এই কমিশন বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে গত ২১ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মহান মে দিবস এবং শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ২০তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে জারি করা স্মারকে বলা হয়েছে:
১. যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের যথাযথ অনুসরণ ব্যতীত কোনো শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। ছাঁটাইয়ের পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ-এর ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শ্রম আইন অমান্য করলে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২. মহান মে দিবসে সকল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোনো কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন দমনে পুলিশ গুলি চালালে বহু শ্রমিক হতাহত হন। এই আত্মত্যাগের ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায় এবং ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হতে শুরু করে। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিবস শ্রমজীবী মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্বাআলো/এস