সম্পাদকীয়

প্রতিবাদের ছলে নারী অবমাননা কাম্য নয়

সম্পাদকীয় ডেক্স | May 6, 2025

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনা নতুন করে আমাদের চিন্তা ও সমাজের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গলায় রশি বাঁধা এবং শাড়ি পরা একটি নারী প্রতিকৃতিকে কয়েকজন ব্যক্তি এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছেন। একপর্যায়ে শাড়িটি খুলে যায় এবং পরে দুজন এসে সেটি আবার পরানোর চেষ্টা করেন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

এর মাধ্যমে যে নারী অবয়বের প্রতি অসম্মান ও অশালীন আচরণ করা হয়েছে, তা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবাদ করা বা মতপ্রকাশের অধিকার একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মৌলিক স্তম্ভ, তবে সেই অধিকার যেন মানবিকতা ও শালীনতার পরিপন্থী না হয়, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠান থেকে এমন একটি ঘটনার উদ্ভব কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে না, বরং পুরো সমাজের মনোজগতেও একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। নারীর প্রতি এই ধরনের অপমানজনক আচরণ আমাদের সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গবিদ্বেষ এবং সহিংসতার একটি বড় প্রতিফলন। প্রতিবাদের নামে এই ধরনের আচরণ কেবল উদ্দেশ্যহীন নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক শান্তি ও সহাবস্থানকে বিপন্ন করে।

আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে, সমাজে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক—নারীর প্রতি অসম্মান, তা সে বাস্তবে হোক বা প্রতীকে, কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেই স্বাধীনতার পরিধি শালীনতা, দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার মধ্যে থাকা উচিত। এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে কোনও প্রতিবাদ বা আন্দোলন হতে হবে সুশীল ও শালীন, যাতে সমাজের প্রতিটি অংশের মানবাধিকার এবং সম্মান রক্ষা হয়।

Shadhin Alo