কাশ্মীরে পর্যটক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর জবাবে পাকিস্তান শনিবার (১০ মে) ‘অপারেশন বানিয়ান মারসুস’ নামে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। দুই দেশেই পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে, শ্রীনগর ও করাচিতে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পারমাণবিক ক্ষমতাধর এই দুই প্রতিবেশী দেশ ফের পুরোদস্তুর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
শনিবার পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। শ্রীনগর থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভোর পৌনে ছয়টার দিকে সেখানে কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে এবং শহরজুড়ে ব্ল্যাকআউট চলছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের করাচির ফয়সাল হাইওয়েতে একাধিক বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন। গুলিস্তাঁ-এ-জওহার এলাকার এক বাসিন্দা জুবেইর আশরাফ বিবিসিকে জানান, ভোরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং আকাশে আলোর ঝলকানি দেখেছেন তিনি।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতেই উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যমুনাসহ ৪ বাংলাদেশি টিভির ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করলো ভারত
দুই দেশের সাম্প্রতিক এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয়। জবাবে পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি স্থগিত এবং ভারতের জন্য আকাশসীমা নিষিদ্ধ করার মতো পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পাকিস্তান সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতকে যুদ্ধের শামিল হিসেবে অভিহিত করে।
এরপর থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে টানা প্রায় ১২ রাত ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যার জন্য উভয় দেশই একে অপরকে দোষারোপ করে। গত মঙ্গলবার ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরসহ অন্তত নয়টি জায়গায় ‘অপারেশন সিন্ধুর’ নামে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, এই হামলায় তারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে এবং অন্তত ১০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করে, ভারতের হামলায় তাদের ছয়টি স্থানে আঘাত হেনেছে, এতে ৩৮ জন বেসামরিক লোক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে এবং তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এছাড়া, পাকিস্তান বাহিনীর গোলাবর্ষণে কাশ্মীরে ১৫ জন ভারতীয় বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলেও ভারত জানায়।
ভারতে ড্রোন হামলা চালালো পাকিস্তান, উত্তেজনা চরমে
এই হামলার পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কড়া পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি বার্তা দেয়া হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে শনিবার ‘অপারেশন বানিয়ান মারসুস’ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করায় আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
স্বাআলো/এস