জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুর সেনপাড়ার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেনাবাহিনী। শনিবার (৩১ মে) দিবাগত মধ্যরাতে নগরীর পায়রা চত্বর মোড়ে এই জিজ্ঞাসাবাদ অনুষ্ঠিত হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে জি এম কাদেরের ‘দ্য স্কাই ভিউ’ বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় জি এম কাদের বাড়িতেই ছিলেন। এই ঘটনার পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যা এলাকায় উত্তেজনা তৈরি করে।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম নগরীর পায়রা চত্বর মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় স্থানীয় বিএনপির নেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
খবর পেয়ে ওইসময় সেখানে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি সেখানে উপস্থিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপ শেষে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি – যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে এবং এটি প্রয়োজন। তবে রাত ১টা, ২টার সময় জিজ্ঞাসাবাদ দৃষ্টিকটু দেখায় মন্তব্য করে তিনি প্রত্যাশা করেন, দিনের বেলা অফিস সময়ে যেন তাদের ডাকা হয় এবং এ বিষয়ে সবাই সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে।
এর আগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় সারজিস আলম বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের ‘বি টিম’ উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল। কেন এসব ঘটনা ঘটছে, তার কারণ আগে খোঁজা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পরে সাংবাদিকদের সারজিস আলম বলেন, রংপুরে জি এম কাদেরের আসা, মিটিং করা এবং জাতীয় পার্টির সাবেক মেয়র মোস্তফাকে মেয়র পদে পুনর্বহাল করা নিয়ে বিক্ষোভ – এসব সামগ্রিক বিষয়ে এখানে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াই করেছে দাবি করে তিনি বলেন, যখন বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, হয়রানি হয়েছে, তখন জাতীয় পার্টি ক্ষমতার সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে ‘ডামি বিরোধী দল’ সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দিয়েছে। তার মতে, আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে, বি টিম হিসেবে জাতীয় পার্টিও একই কাজ করেছে এবং আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে বা হবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন, একই পরিণতি জাতীয় পার্টিরও হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো, জাতীয় পার্টি এখনো নিষিদ্ধ না কেন? জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ মিলে কীভাবে তারা এতবড় মিছিল করতে পারে? জাতীয় পার্টির এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে যারা মিছিল করেছে, সেখানে কারা হামলা করেছে তা আগে তদন্ত করতে হবে। তার মতে, মামলা হলে আগে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে হবে এবং প্রথম তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তিনি বলেন, কেউ যদি ঘটনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তার জের ধরে দুয়েকটা বাইক পুড়ে যায়, সেটার দায় কখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা এনসিপি-র ওপর বর্তানো যায় না।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার পর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন বাদী হয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ১৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
স্বাআলো/এস
