রংপুর বিভাগ

তিস্তায় পানি বৃদ্ধি: তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, বন্যা আতঙ্ক

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট | June 3, 2025

টানা ভারি বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত দুদিনে লালমনিরহাটে আকস্মিকভাবে তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার তিস্তা তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি এবং রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। যদিও এটি বিপৎসীমার নিচে, তবে গত কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রবিবার (০১ জুন) সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার মাত্র ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি কমতে শুরু করে এবং সোমবার দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। কিন্তু এরপর মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে (সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) পানি দ্রুত বেড়ে আবারও ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর দুই পাড়ের মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

বাড়তে পারে নদীর পানি, বন্যার ঝুঁকিতে যেসব জেলা 

পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। অনেক জমিতে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হলেও তা ঘরে তোলার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পাট, ভুট্টা ও বাদামের মতো ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন নৌকা ও অন্যান্য উপায়ে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে ফসল উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

মহিষখোচার গোবর্ধন এলাকার কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমার দুই একর জমিতে ভুট্টা ছিল। কাটার সময় হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ পানি এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন আর কিছুই করার নেই। নৌকা দিয়ে যা পারি তুলে নিচ্ছি।

আরেক কৃষক হাসান আলী বলেন, আর ১৫/২০ দিন সময় পেলেই বেশিরভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। হঠাৎ করে বন্যায় ক্ষতির আশঙ্কা করছি। শেষ সময়ে এসে পানি পেলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

বেড়েছে তিস্তার পানি, খুলে দেয়া হয়েছে ৪৪ গেট

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সাইখুল আরিফিন বলেন, ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। এ বছর বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা পরবর্তীতে ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, শুষ্ক মৌসুমে যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছিল, সেখানে প্রতিরক্ষা কাজ আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। জরুরি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী তিন দিন তিস্তায় পানি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে তিস্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo