লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা সানিয়াজান নদী একসময় ছিল স্থানীয় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগের প্রতীক। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নদী পারাপারে নির্ভর করতে হতো নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো বা নৌকার ওপর, যা বিশেষ করে বর্ষাকালে হয়ে উঠত ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হতো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ সেতু নির্মাণ প্রকল্প’-এর অধীনে সানিয়াজান নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি আধুনিক সেতু। ২১ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২১০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি এখন এলাকার মানুষের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণের আগে গড্ডিমারী চরাঞ্চলসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নদীর ঘাট ব্যবহার করে চলাচল করতে হতো। বিশেষ করে এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হতো। অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া বা কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছানো ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ।
চরের শিশুরা যেনো জন্ম থেকেই প্রশিক্ষিত শ্রমিক!
নতুন সেতু নির্মাণের পর পুরো এলাকার চিত্রই বদলে গেছে। এখন লালমনিরহাটের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প দোয়ানী তিস্তা ব্যারেজ, গড্ডিমারী চরাঞ্চলসহ আশপাশের গ্রামের কৃষকেরা সহজেই তাদের উৎপাদিত ধান, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল স্থানীয় হাট-বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন। এতে একদিকে যেমন পরিবহন খরচ কমেছে, তেমনি কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।
সেতুটির সুফল ভোগ করছেন শিক্ষার্থীরাও।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রায়হান আলী জানান, আগে স্কুল ও কলেজে যেতে আমাদের নৌকা ব্যবহার করতে হতো। বর্ষার সময় নদী পার হতে গিয়ে অনেক সময়ই ক্লাস মিস হয়ে যেত। এখন সেতুটি হওয়ায় সময়মতো পৌঁছাতে পারি। আমাদের পড়ালেখায় মনোযোগ বেড়েছে, যাতায়াতে আর ভয় নেই।
স্থানীয় এক কৃষক তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আগে খুব কষ্ট করে নদী পার হয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতাম, আর অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়াটাও ছিল দুঃসাধ্য। এখন এই সেতুর কারণে আমাদের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটেছে। কৃষিপণ্য বাজারে নিতে সময় বাঁচে, খরচও কমে গেছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, এই এলাকাকে আগে দুইটি ভাগে ভাগ করে চর ও কায়েম নামে আলাদা পরিচিতি দেয়া হতো। কিন্তু এখন এলজিইডির আওতায় সেতুটি নির্মাণের ফলে দুই অংশের মধ্যে সংযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষজন এখন সহজে চলাচল করতে পারছে, যা এই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, গড্ডিমারী ইউনিয়নের এই সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে হাজারো মানুষের যাতায়াত সুবিধা হয়েছে। এটি শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং এই এলাকার উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
এই সেতু নির্মাণের ফলে সানিয়াজান পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটেছে এবং এলাকার সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন দুয়ার খুলেছে।
স্বাআলো/এস