জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলে

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | June 7, 2025

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। বিচার ও সংস্কারের কাজ আগামী রোজার ঈদের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন সময়মতো পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশ করবে এবং নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “জুলাই সনদ হবে একটি প্রতিশ্রুতির দলিল। এখানে জনকল্যাণমুখী সংস্কারগুলোর একটি সম্মিলিত তালিকা থাকবে এবং দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার জানাবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত বছরের ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এ সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বিচারপর্ব গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচার হচ্ছে, যা বিচারব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা পুনর্গঠনে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, “বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গুম, খুন, নির্যাতন এবং আর্থিক খাতের দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। এসব অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করার বহু চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু প্রযুক্তির সাহায্যে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে।”

তিনি জানান, একটি স্বাধীন গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠনের পর ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় ছয়টি গুমকেন্দ্র পরিদর্শন করা হয়েছে এবং গণশুনানির মাধ্যমে আট শতাধিক ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন। গুমসংক্রান্ত একটি আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারকে অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ভবিষ্যতের সঙ্কট এড়াতে হলে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন অপরিহার্য। এতে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ সার্থক হবে।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ করিডর দিয়েছে—এমন অপপ্রচারকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “জাতিসংঘের প্রস্তাবিত একটি ত্রাণ চ্যানেল এখনো প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে। এই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ছয় মাসে বাংলাদেশে ৭৫৬ মিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। চীন, জাপান, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈঠকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”