যশোরে করোনা আতঙ্ক: পরীক্ষার কীট সংকট, টিকা থাকলেও মেয়াদউর্ত্তীণের পথে

রুহুল আমিন | June 18, 2025

যশোরে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এক্সবিবি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও যশোর সদর হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য একটি করে ওয়ার্ড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, কিন্তু করোনা পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় কীট নেই এবং নতুন করে টিকার সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। এমনকি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যে সীমিত সংখ্যক টিকা মজুত আছে, তার বেশিরভাগরই মেয়াদ আগামী জুলাই মাসে শেষ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের অভাব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এক্সবিবি অত্যন্ত সংক্রামক এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ৫ গুণ বেশি বিষাক্ত। এর মৃত্যুর হারও বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে; অনেক সময় জ্বর বা কাশি ছাড়াই মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পিঠ ও জয়েন্টে ব্যথা, নিউমোনিয়া এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষণ ছাড়াই ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে, যা ভাইরাল নিউমোনিয়া ও তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণ হয়। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ভ্যারিয়েন্ট সনাক্তকরণের জন্য নাকের সোয়াব টেস্ট অনেক সময় ভুল নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে পারে, যা ভাইরাসটিকে সহজে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।

যশোরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু

ইতোমধ্যে যশোরে ওমিক্রন এক্সবিবি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত একজন নারী শনাক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি নিয়ে তিনি ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। তার উপসর্গ দেখে চিকিৎসকের সন্দেহ হওয়ায় করোনা পরীক্ষার নির্দেশনা দেন। সদর হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ইবনেসিনা হাসপাতালে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং বৃহস্পতিবার দুপুরে তার শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন এক্সবিবি ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। এই রোগী শনাক্ত হওয়ার পর জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও করোনা প্রতিরোধের জন্য হাসপাতালগুলোতে কোনো টিকা নেই এবং পরীক্ষার কীটও সরবরাহ করা হয়নি।

যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সাত বেডের একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যার মধ্যে একটি মহিলা বেড। প্রয়োজন হলে এই ওয়ার্ডে ৩০টি বেডের ব্যবস্থা করা সম্ভব। তবে হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো কীট বা টিকা নেই। টিকার বিষয়টি সিভিল সার্জন কার্যালয় দেখভাল করে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে কীটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে থাকে।

যশোরে এক নারী করোনায় আক্রান্ত

তিনি জানান, হাসপাতাল করোনা রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য শতভাগ প্রস্তুত।

সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে টিকার সংকট থাকায় নতুন করে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। যশোরে যেসব টিকা আছে, তার মেয়াদ আগামী জুলাই মাসে শেষ হবে। যশোর পৌরসভায় প্রায় ২২০০ এবং সদর উপজেলায় অল্প কিছু টিকা মজুত আছে, যা আগ্রহী ব্যক্তিরা নিতে পারবেন।

তিনি আরো জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য কীটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং আশা করছেন আগামী সপ্তাহ থেকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা সম্ভব হবে। এছাড়া, করোনার প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিভিল সার্জন জনগণকে যতটা সম্ভব জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলা, খোলা জায়গায় ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি কোভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও মারাত্মক হতে পারে, তাই সকলকে সর্বোচ্চ সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও টিকার অভাব জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo