ব্রেকিং নিউজ
বাংলাদেশের নতুন উদ্বেগ

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি!

ডেস্ক রিপোর্ট | June 20, 2025

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রভাব বিস্তারকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গাদের একাধিক সশস্ত্র সংগঠন। ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে সদস্য সংগ্রহ এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশিক্ষণের কার্যক্রমও চলছে।

তবে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “ক্যাম্পে এমন কোনো সশস্ত্র তৎপরতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।”

সংগঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো

ক্রাইসিস গ্রুপ জানায়, আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনসহ একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী অতীতে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকলেও, বর্তমানে তারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথভাবে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিক বসতির দাবি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় আবেগকে উস্কে দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করছে। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইকে “অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদ” হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, ফলে শরণার্থী শিবিরগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য “উর্বর মাঠে” পরিণত হয়েছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সম্ভাব্য পরিণতি

বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা অনিরাপদ হয়ে পড়বে, এবং নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই যুদ্ধ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।”

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এই সব আশঙ্কা ও দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো প্রশিক্ষণ বা অস্ত্রধারীর খবর নেই। যা বলা হচ্ছে, তা গুজব বা অনুমানভিত্তিক।”

ক্রাইসিস গ্রুপের সুপারিশ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা নেতৃত্ব ও আরাকান আর্মির মধ্যে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
সংস্থাটি মনে করে, ক্যাম্পে সহিংসতা কমলেও সশস্ত্র তৎপরতা ও প্রভাব আগের চেয়ে বেড়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য।

রাখাইনে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত এড়াতে এখনই কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন—এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। অন্যথায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, তেমনি নতুন করে বাংলাদেশকেও শরণার্থী চাপ ও নিরাপত্তা সংকট মোকাবিলা করতে হতে পারে।

Shadhin Alo