খুলনা বিভাগ

সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে নাকাল শহর-গ্রাম

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা | June 22, 2025

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার জনজীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই তীব্র জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। নতুন করে আজ সকাল থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে বৃষ্টি বুধবার (১৮ জুন) ভোর ৫টা থেকে টানা বর্ষণে রূপ নেয়, যা চলে ১৯ জুন পর্যন্ত। এরপর দুইদিনের বিরতির পর আজ রোববার (২২ জুন) সকাল ৭টা ২০ মিনিট থেকে আবারো মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, গত ১৭ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত সাতক্ষীরায় মোট ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আগামী পাঁচ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং বর্ষাকালে এমন আবহাওয়া প্রায় সময়ই বিরাজ করবে।

টানা বৃষ্টির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রাস্তাঘাট কাদামাখা ও জলাবদ্ধতায় পূর্ণ থাকায় শহরের মোড়গুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, নেই স্বাভাবিক কোলাহল।

আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘রিমঝিম’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শ্রমজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলেই শহরের রাস্তায় চলাচল করা যায় না। যেদিকে তাকাই কাদা আর পানি। পৌর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। জলাবদ্ধতায় হাঁটাও দুঃসাধ্য।

এদিকে, টানা বৃষ্টিতে শহরের বাজার এলাকাও বিপর্যস্ত। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কর্ণ বিশ্বাস কেডি বলেন, “প্রচুর বৃষ্টির কারণে ঘরের বাইরে কেউ বের হতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা থাকলেও ক্রেতারা আসতে পারছেন না। এতে করে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।” তিনি জানান, বাজার এলাকার রাস্তাঘাট ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা দুইজনেরই ভোগান্তি চরমে।

শুধু শহর নয়, সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্ভোগের চিত্র আরো ভয়াবহ। বিশেষ করে শ্যামনগরের প্রায় ৩৩ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত গাবুরা ইউনিয়ন। সেখানে পাকা রাস্তার কোনো অস্তিত্ব নেই, যাও বা কাঁচা রাস্তা আছে, তাও চলাচলের অযোগ্য।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষা এলেই ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন। চলার মতো রাস্তা না থাকায় কাদা ডিঙিয়ে যেতে হয়। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবনও নেই। তারা বলেন, কোনটা রেখে কোনটা বলবো! চারদিকে শুধু পানি আর কাদা। এই দুর্ভোগের যেনো কোনো শেষ নেই।

সাতক্ষীরা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পানি নিষ্কাশন, রাস্তার উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের অবহেলা ও দুর্বলতার কারণেই প্রতি বছর বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ নতুন করে দেখা দেয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ ও টেকসই সমাধানের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। শহর ও গ্রামাঞ্চলের জনগণের একটাই কথা— এই দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই!

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo