আজ ২৭ জুন—একুশে পদকপ্রাপ্ত, নির্ভীক সাংবাদিক, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বালু’র ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে কর্মস্থলের সামনে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন তিনি।
২০০৪ সালের ২৭ জুন। মেয়ে হুসনা মেহেরুবা টুম্পা মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলতার সংবাদে উদ্বেলিত বালু সেদিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুলনার ইকবালনগরের বাসা থেকে দৈনিক জন্মভূমি অফিসে আসেন মিষ্টি মুখ করাতে।
গাড়ি থেকে নামার পরপরই জন্মভূমি ভবনের ফটকের সামনে জাতিসংঘ শিশু পার্কের দিক থেকে একদল সন্ত্রাসী তার দিকে বোমা ছুড়ে মারে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণে তিনি ঘটনাস্থলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ হামলায় তার বড় ছেলে আসিফ কবীরও আহত হন।
হুমায়ুন কবীর বালু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ৪ অক্টোবর, নড়াইলের ইতনা গ্রামে তার নানাবাড়িতে। পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের বড়ফা গ্রামে। পিতা ইমান উদ্দিন সরদার, মাতা রাবেয়া বেগম।
তিনি খুলনার বি কে ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
ছাত্র রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়—১৯৭২ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘জয় বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার পর যুক্ত হন সাপ্তাহিক জন্মভূমি পত্রিকার সাথে, যা ১৯৮৩ সালে দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তিনি শুধু সম্পাদক নন, একজন সংগঠকও ছিলেন। খুলনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি, খুলনা আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, বাসসের পরিচালক, জনসংখ্যা পরিষদ ও পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন।
মিড-টাউন রোটারি ক্লাবের সভাপতি এবং বাংলাদেশ কাউন্সিলর অব এডিটরসের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন—১৯৯৩ সালে সুজলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, ১৯৯৪ সালে ড. আশরাফ সিদ্দিকী পদক, ১৯৯৭ সালে সুর-ঝঙ্কার সম্মাননা, আর ২০০৯ সালে তাাকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।
সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু ছিলেন সত্যের প্রতি অনড়, নির্ভীক ও সমাজ সচেতন সাংবাদিকতার প্রতীক। তার মৃত্যু আজও খুলনার গণমাধ্যম, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোক ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে আছে।
খুলনার সংবাদপত্র শিল্প ও মুক্ত সাংবাদিকতার পথিকৃত এই মানুষটির অবদান স্মরণীয় করে রাখতে তার নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজ।