নোয়াখালীতে টানা চারদিনের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের পর গত দুদিন ধরে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করলেও জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। যদিও কিছু কিছু এলাকায় পানি কিছুটা কমেছে, তবে বেগমগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে উল্টো পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (১২ জুলাই) জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকায় বন্যার পানি নামছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। এ কারণে বেশিরভাগ এলাকায় এখনো পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
অন্যদিকে, বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, পাশের জেলা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টিপাত না থাকলেও এসব অঞ্চলে পানি বাড়ছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান কয়েকটি গ্রামে পানি বাড়ার বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার মোট ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যায় কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ৪৫টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
দেশের দুই জেলায় প্রবল বন্যার আশঙ্কা
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়াই শহরবাসীর এ দুর্ভোগের প্রধান কারণ। অনেকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেও এজন্য দায়ী করছেন। এমনকি হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মাইজদী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে আছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। যদিও টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, তবে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি এবং আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। তবে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, বন্যাদুর্গতদের জন্য পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের চিকিৎসায় গঠিত ৫১টি মেডিকেল টিমের মধ্যে ২৯টি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার আশা, বৃষ্টি না থাকলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
স্বাআলো/এস