২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির একটি খসড়া নীতিমালা এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের শিক্ষার্থীরা এই বিশেষ কোটা সুবিধা পাবেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এমন একটি সুপারিশ অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম থেকেই এটি কার্যকর হবে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কোটা প্রস্তাবে শহীদদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কলেজ ভর্তির নীতিমালায় মোট ৭ শতাংশ কোটা রয়েছে, যার মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ। বোর্ড জানিয়েছে, কলেজ পর্যায়ে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে এবং নাতি-নাতনিদের কোটাও উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে। তাই বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার বাস্তবতা পর্যালোচনা করে এবং একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্বীকৃতি হিসেবে এই নতুন কোটা যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় আরও বেশ কিছু সংস্কার আসতে যাচ্ছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির সংবাদমাধ্যমকে জানান, ২০২৫ সালের একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় বেশ কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। কোটাব্যবস্থা, মেধাক্রম অনুযায়ী অগ্রাধিকার, মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া এবং বেসরকারি কলেজগুলোর সংকট বিবেচনায় নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাস্তবসম্মত ও ঐতিহাসিক ভিত্তিতে নতুন কোটার দরকার ছিল।
এছাড়াও নতুন নিয়মে ভর্তি কার্যক্রমে সময়সীমা নির্ধারণ, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি উৎসাহী করা এবং কমমানের কলেজগুলোর সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও খসড়া নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে, যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। অন্যদিকে, দেশের মানসম্মত কলেজ—যেমন নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, ভিকারুননিসা, রাজউক, রেসিডেনশিয়াল, আইডিয়াল—এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৪০ থেকে ২৫০টির বেশি নয় এবং এসব কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এর ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ তাদের কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। গত বছরও প্রায় সাড়ে আট হাজার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারেনি।
ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রেজাউল হক বলেন, ভালো কলেজগুলো তাদের নিজস্ব স্কুল শাখার শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে অগ্রাধিকার দেয়। বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ খুব সীমিত থাকে। তিনি আরো বলেন, অনেক শিক্ষার্থী কলেজ পছন্দ সঠিকভাবে নির্ধারণ না করায় প্রথম ধাপে বাদ পড়ে যায়। সচেতনভাবে কলেজ পছন্দ করা ও সময়মতো আবেদন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যানবেইস ও শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণির জন্য আসন রয়েছে প্রায় ২২ লাখ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে আরও ৯ লাখ আসন রয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার আসন। সব মিলিয়ে দেশে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসনের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ ২৫ হাজার। অথচ এবছর এসএসসি পাস করেছে মাত্র ১৩ লাখ। অর্থাৎ, এবছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় প্রায় ২০ লাখেরও বেশি আসন খালি থাকবে। বোর্ডের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর অন্তত ২২০টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা ও পরিকল্পনার অভাবকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
অন্যদিকে, নটর ডেম, হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফ কলেজের মতো মিশনারি পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে এবারও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব নিয়মে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও জানান, তারা প্রতি বছরই নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন এবং এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না।
শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেই শুরু হবে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ। তিনটি ধাপে আবেদন ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই প্রকাশিত ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম।
স্বাআলো/এস