জাতীয়

জরুরি অবস্থা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় নয়, লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | July 13, 2025

জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা যাতে রাজনৈতিক স্বার্থে আর ব্যবহৃত না হয়, সেই লক্ষ্যেই সংবিধানে নতুন বিধান সংযোজনের বিষয়ে একমত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতির ঘোষণার পূর্বেই মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদন প্রয়োজন হবে এবং ওই বৈঠকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বা তার অনুপস্থিতিতে উপনেতা উপস্থিত থাকবেন।

রবিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১২তম দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছায়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে। প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, সংবিধানের ১৪১ এর ‘ক’ এর ‘১’ ধারা মতে রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরি-অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, যা যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোনো অংশের নিরাপত্তার বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হলে তিনি অনধিক নব্বই দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

বিদ্যমান সংবিধানে জরুরি অবস্থার সর্বোচ্চ মেয়াদ ১২০ দিনের কথা বলা আছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের শব্দগুলোর পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে, জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়েও সংবিধানের ৪৭ (৩) এর বিধান সাপেক্ষে কোনো নাগরিকের জীবন অধিকার, নির্যাতন ও নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি হইতে রক্ষা পাইবার অধিকার খর্ব করা যাবে না বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা নিয়ে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছুটা দ্বিমত দেখা যায়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মন্ত্রিসভার পরিবর্তে সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদের মন্ত্রিসভার সঙ্গে বিরোধীদলকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন। আলোচনার একপর্যায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জরুরি অবস্থা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা নেত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিতের প্রস্তাব করেন, যা বিএনপি সমর্থন করে। ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বিরোধীদলীয় নেতা না থাকলে কে উপস্থিত থাকবেন, সেই সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান, বিরোধীদলীয় উপনেতাও মন্ত্রী পদমর্যাদার।

সব পক্ষের আলোচনার পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা হবে। এই মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বা নেত্রী বা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন। এই সংশোধনের ফলে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের একক ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং এটিকে আরও জবাবদিহিমূলক ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে করার পথ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo