টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে যশোরের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকার আমন ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চারা পচে নষ্ট হওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই তীব্র চারা সংকটে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। জমি প্রস্তুত করেও সময়মতো চারা রোপণ করতে না পারায় এ বছর আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে আমন রোপণের ভরা মৌসুম। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, কাশিমপুর, হৈবতপুর এবং জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকেরা জমি চাষ, আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগসহ সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছেন। কিন্তু ধান রোপণের মূল উপকরণ চারার জন্যই এখন হাহাকার চলছে। ভারি বর্ষণে অধিকাংশ বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। যশোরের বিখ্যাত এড়লের বিল, বদধানার বিল, হরিণার বিলসহ অসংখ্য নিচু এলাকার জমিতে এবার আমন রোপণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের কৃষক বেলাল হোসেন জানান, অতিবৃষ্টিতে আমার বীজতলার সব চারা পচে গেছে। নিজের জমিতে ধান লাগানোর মতো চারাও নেই। অথচ অন্য বছর এই সময়ে আমি চারা বিক্রি করি। এখন চারা কেনার জন্য ঘুরছি, কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
একইভাবে চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদা ইউনিয়নের কৃষক কবির মিয়া বলেন, “আমার ১৫ কেজি ধানের পুরো বীজতলাটাই বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। দেড় বিঘা জমি এখনো পানির নিচে। বাকি জমিতে ধান লাগানোর জন্য অনেক খুঁজেও চারা জোগাড় করতে পারিনি।”
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমন চাষের উপযুক্ত সময় আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর মধ্যে কৃষকরা চারার ব্যবস্থা করতে না পারলে তাদের পুরো মৌসুমটাই ক্ষতির মুখে পড়বে। সংকটকে পুঁজি করে এরই মধ্যে চারার দামও বেড়েছে অনেক।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। অনেক কৃষক ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে বীজতলা তৈরি করছেন, যা দেরিতে ফলন দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারি সহায়তা ও বিকল্প বীজতলা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আমন মৌসুমে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে এবং জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। এই সংকট কেবল কৃষকের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও এটি একটি হুমকি। কৃষি অফিস এই দুঃসময়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
স্বাআলো/এস