২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল, তা কেবল বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই দিনে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। রাহুমুক্ত হয়েছে দেশ। এই দিনটি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য আনন্দের এবং বিজয়ের।”
তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জনগণ প্রতিবছর এটি ছুটির দিন হিসেবে পালন করবে।
পূর্ববর্তী শাসনের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “পলাতক স্বৈরাচার দেশে এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করেছিল। গুম, খুন, অপহরণ, হামলা-মামলা ও নির্যাতনকে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করা হয়েছিল।” তিনি অভিযোগ করেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠরোধ করতে দেশে শত শত গোপন বন্দীখানা বা ‘আয়নাঘর’ তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেককে চিরতরে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমান আরো বলেন, “বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।”
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “অভ্যুত্থান দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। শিশু আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।”
তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক তুলনা টেনে বলেন, “১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সাল ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ৭১-এর মতো ২৪-এর শহীদদেরও বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।”
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারেক রহমান একটি “ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ” গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “জনগণের সরাসরি ভোটে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করাই হবে শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধের প্রথম ধাপ।”
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী শাসনের তুলনা করার বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে, সংসদ ছেড়ে সাংসদ পালিয়েছে, আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছে। এটি বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্রের এখনো কোনো অনুতাপ নেই।”
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমতকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি আহ্বান জানান, এই ভিন্নমত যেন ফ্যাসিবাদ বা চরমপন্থার পুনরাগমনের কারণ না হয়।
সবশেষে, তিনি দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মব ভায়োলেন্সকে উৎসাহিত করবেন না। ‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’—আমরা তেমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে।” এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি ও তার দল বিএনপি জনগণের সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
স্বাআলো/এস