হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ জীবনে মাছ ধরতে ঝাকি, চাক ও কোনা জালের ব্যবহার মিশে আছে সেই দূর অতীত থেকে। সরকারি নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ও ব্যবহার বাড়ছে। খাল-বিল, ছোট নদীতে ঘেরা রয়েছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার অনেক গ্রাম। আর ওই সকল গ্রামের সিংহভাগ বাসিন্দারা সারা বছর নদী-নালা-ডোবা-পুকুর থেকে মাছ শিকার করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকারের চাহিদা বেড়ে যায়।
আগে প্রায় বাড়িতেই মাছ ধরার জন্য জাল বোনা দেখা যেতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে সময় ব্যয় করে এখন তেমন কেউ আর জাল বোনে না। অধিকাংশ মানুষ বাজার থেকে জাল কিনে অনেন। জাল বিক্রির এমনই একটি পসরা বসেছে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাঁপারহাটে। ছোটখাট জালের দোকানে গ্রামের সাধারণ মানুষদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো দেখা গেছে।
দেখা গেছে, মাছ ধরার নানা সাইজের ঝাকি, কোনা এবং চাক জাল ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে দাম হাকিয়ে বেচাবিক্রি করছে। এ সময় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বিক্রি করতে দেখা যায়। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ক্যামেরা দেখে অনেকে ব্যবসায়ী না বুঝে ভয়ে স্থান ত্যাগ করে।
জাল ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, সারা মাস ওই স্থানে বসে এই ঝাকি, চাক ও কোনা জাল বিক্রয় করে আসছেন। বর্তমানে কারেন্ট জালের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এই জালের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু পূর্বপুরুষের পেশা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য এখনো এই জাল বিক্রয় করে যাচ্ছেন তিনি।
জালের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী মঈনুল হোসেন জানান, সাইজ অনুযায়ী জালের বিক্রয়মূল্য একেক রকমের। বড় আকারের ঝাকি জাল সর্বনিম্ন এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়াও মাঝাড়ি আকারের ঝাকি জাল এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাকজাল সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনা জাল ৬৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, বর্ষার সময়ে জালের চাহিদা বেশি থাকায় আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ টা এবং তার বেশিও ছোট বড় ঝাকি জাল বিক্রি হয়। কিন্তু এই মৌসুম শেষ হলে অলস হয়ে পড়ে থাকতে হয়। তখন প্রতিদিন ২ থেকে ৩টা জাল বিক্রি করতে পারি। তাও আবার সামান্য লাভে। এমনো সময় যায় সপ্তাহে একটাও বিক্রি করতে পারি না।
উপজেলার কাকিনা থেকে চাপারহাটে জাল কিনতে এসেছেন হায়দার আলী। তিনি বলেন, হাটে হরেক রকম জাল পাওয়া যায়। তাই জাল কিনতে এসেছি এখানে। পছন্দ মতো ঝাকি জাল কিনলাম।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার বৃহত্তম হাট চাপারহাট। সপ্তাহে দুইদিন এখানে হাট বসে। জেলা-উপজেলা থেকে এখানে হাজারো মানুষ আসেন। প্রতি সোমবার ও শুক্রবার দুই দিন সাপ্তাহিক হাট বসে। বিভিন্ন স্থান থেকে জাল ক্রয় করতে আসেন ক্রেতারা। জেলেরা হাটের দিন এখানে বিভিন্ন ধরনের জাল বেচা- কেনা করে থাকেন। যার কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখানকার জালের হাট।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম জানায়, প্রতি সপ্তাহে হাট গুলো পরিদর্শন করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যেমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল চোখে পড়লে পুড়িয়ে ফেলা ও ব্যবসায়ীর জরিমানা করা হয়ে থাকে। এর আগেও শতাধিক নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বিভিন্ন ডোবা থেকে জেলেদের মাধ্যেমে তুলে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে নিষিদ্ধ জাল বিক্রি না করে এজন্য তাদের বলা হয়েছে।
স্বাআলো/এস