অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন অভিনেত্রী হিমু, ফাঁস নেন প্রেমিকের সামনেই

ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমুর আত্মহত্যার ঘটনায় তার প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

উরফি জিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, অভিনেত্রী হিমু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। গত ৪ মাসে প্রায় ২১ লাখ টাকাসহ ২-৩ বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এর আগেও প্রেমিক উরফি জিয়াকে ৩/৪ বার আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন।

অবশেষে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হিমু বলেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। তবে উরফি জিয়া পাত্তা দেননি। পরে জিয়ার সামনেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন হিমু।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, হিমু আত্মহত্যার ঘটনায় উরফি জিয়াকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বংশাল থেকে উরফি জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

উরফি জিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিয়ে হয়েছিলো এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্কের সুবাদে জিয়ার সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু আর জিয়ার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো।

হিমুর ২০০০ সালে বিয়ে হয় ও ২০০৫ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে তৌফিক নামে একজনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো। তবে ২০১৭-১৮ সালে তৌফিক সুইসাইড করেন। এরপর হিমু মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন। এরপর থেকেই জিয়ার সঙ্গে হিমুর সম্পর্ক হয়।

২০২০ সালে জিয়া অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন। এরমধ্যে গত ৪ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে জিয়া ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাড়বিতণ্ডা হতো। এছাড়া গত ২/৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে জিয়াউদ্দিন জানায়। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো।

জিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টায় জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরবর্তী সময়ে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়ার মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করেন। হিমু রুমের বাহিরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢোকেন। রুমের সিলিং ফ্যান ঝোলানোর হুকে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে তাকে হুমকি দেন।

তবে জিয়াউদ্দিন র‌্যাবকে জানান, হিমু আগেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জানালেও পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেননি। এবারো আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। কিন্ত কিছুক্ষণ পর দেখেন হিমু সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তখন হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এসময় জিয়া পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। পরবর্তী সময়ে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান।

জিয়া, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক সুইসাইড কেইস বলে পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেন, তখনই হিমুর দুুইটি মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান জিয়া।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তার উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেন। এরপর মোবাইল ২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিহির মেকআপম্যান হিসেবে হিমুর বাসাতেই থাকতেন। ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিনকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাজিন পরে মারা যান। আমাদের গোয়েন্দারা মিহিরের বিষয়ে কাজ করছে। যেহেতু মামলায় আসামি করা হয়েছে উরফি জিয়াকে, তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে, মিহির কতটা এ ঘটনা সম্পর্কে জানতেন। এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, মৃত্যুর কারণ পরিপূর্ণ তদন্তের পর জানা যাবে। ঘটনার সময় জিয়া হিমুর রুমেই খাটে বসা ছিলেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে ৩-৪ বার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে এবার পাত্তা দেননি জিয়া। এরমধ্যেই আমি কি মরতে পারি না, দেখ পারি কি না বলে হিমু দড়িতে ঝুলে পড়েন। জিয়া ও হিমুর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ চালাচালি পাওয়া গেছে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

কার সঙ্গে প্রেম করছেন শাকিবের ‘প্রিয়তমা’ ইধিকা

প্রথমবারের মতো ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে ‘প্রিয়তমা’...

বাস-সিএনজি ও অটোরিকশার সংঘর্ষ, নিহত ৫

শেরপুরে ভাতশালায় বাস-সিএনজি ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৫ জন...

পুলিশ এখনো থানায় টাকা খাচ্ছে: সারজিস আলম

এখনো পুলিশের অনেক সদস্য দেদারছে ঘুষ গ্রহণ করছেন বলে...

৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরু আজ

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি) ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ...