নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে সাড়ে তিন বছর ধরে কন্যা সন্তানের পিতৃ পরিচয় পাওয়ার আসায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আফরোজা খাতুন। কিন্তু সমাজের মানুষের নানা কথায় এবং অবজ্ঞা ও অবহেলার কারণে নিজেকে অনেকটাই অসহায় ভাবলেও কোনো উপায় অবশেষে ধুকে ধুকে কান্নাকাটি করাই শেষ সম্বল।
অপরদিকে এতো বড় অপকর্ম করার পরও অভিযুক্ত শাহিনুর রহমান রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের ইসলাম আলীর মেয়ে আফরোজা খাতুন মানসিক প্রতিবন্ধী। সে কারণে ৩৩ বছর বয়স হলেও পৈত্রিক বাড়িতেই তার শেষ আশ্রয় স্থল। কিন্তু একই পাড়ার গোলাম বারীর ছেলে শাহিনুর রহমানের (৪০) লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আফরোজার দিকে। সুযোগ খুঁজতে থাকেন শাহিনুর। এক পর্যায় ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে বাড়িতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগটি বেছে নেন শাহিনুর। আফরোজা খাতুনকে জোরপূর্বক ধষণ করে পালিয়ে চলে যান শাহিনুর। তবে ওই সময় এই ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে জানানো হলে আফরোজাকে খুন করার হুমকি দেন শাহিনুর। জীবনের ভয়ে কাউকে কিছু জানাতে পারেননি আফরোজা। কিন্তু শারীরিক গঠন ও অসুস্থতার বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিবারের লোকজন আফরোজাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানায় চিকিৎসকেরা।
এরপর বিষয়টি জানার চেষ্টা করে পরিবার। এক পর্যায় শাহিনুর রহমান ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকেলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচনা করেও কোনো সুফল না পেয়ে আফরোজার পিতা ধর্ষক শাহিনুরের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তৎকালীন চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরির্দশক শাহজাহান আহম্মেদ।
কিন্তু শাহিনুর তদবীর করে এই মামলার আলামত হিসেবে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ করিয়ে নিয়ে আসেন। পাশাপাশি এই মামলাটির বিচারক কার্যক্রমে আসামি নির্দোষ বলে খালাস পেতে পারে এমন মন্তব্য করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন আফরোজার পরিবার। আর এই সুযোগে ধর্ষক শাহিনুর স্থানীয় এবং আশেপাশের লোকজনের মাধ্যমে নানা ষড়যন্ত্র করেই চলেছেন। কিন্তু আফরোজার গর্ভের কন্যা সন্তান রোজার বয়স এখন সাড়ে তিন বছর। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার পিতৃ পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি রোজার মা ও নানার পরিবার। ফলে রোজার পরিচয় নিয়ে সমাজে নানা কটু কথার কারণে ওই পরিবারটিও এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত।
এই ব্যাপারে আফরোজার চাচা আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম জানিয়েছেন, শাহিনুর ধুরন্দর প্রকৃতির একজন মানুষ। তিনি তদবীর করে এই মামলার আলামত ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাল্টে ফেলেছেন। আরো বলেছেন, সমাজের অনেকেই শাহিনুরের পক্ষে থাকায় আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করাই এখন বড় কঠিন। রোজার পরিচয় আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম।
স্বাআলো/এস