গত জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (২৫ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এই বিশেষ কর্মসূচির বিস্তারিত জানানো হয়।
এর আগে গত ১৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছিলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে আগামী ১ জুলাই থেকে বিশেষ কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হলেও মূল আয়োজন ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য- জুলাইয়ে যে রকম পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল, আবার সে অনুভূতিটাকে ফিরিয়ে আনা।
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
১ জুলাই: শহীদদের স্মরণে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ সকল উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা। এই দিন থেকে জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হবে, যা ১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এছাড়াও জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু হবে।
৫ জুলাই: বিভিন্ন সময়ে অবৈধ আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যাতন প্রচারে দেশব্যাপী পোস্টারিং কর্মসূচি চালু।
৭ জুলাই: জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি স্মরণে Julyforever.org নামক একটি ওয়েবসাইট চালু।
১৪ জুলাই (‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’): জুলাই নারী দিবস হিসেবে এই দিনটিকে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিন প্রত্যেক জেলায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন, শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ৬৪টি জেলায় ও দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাইয়ের ভিডিও প্রদর্শন, টিএসসিতে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, প্রজেকশন ম্যাপিং, জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শোর আয়োজন রয়েছে।
১৭ জুলাই (‘শিকল-পরা ছল’): প্রতীকী কফিন মিছিল এবং দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা অনুষ্ঠান।
১৮ জুলাই (‘আওয়াজ উডা’): ১ মিনিটের প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, জুলাইয়ের গান, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, ড্রোন শো, ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠান, ট্র্যাশন শো ও ম্যারাথন।
১৯ জুলাই (‘কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা’): এইদিনটিকে গণহত্যা ও ছাত্রজনতার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নরসিংদী ও সাভারে শহীদদের স্মরণে সমাবেশের পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
২৪ জুলাই (‘কি করেছে তোমার বাবা’): শিশু শহীদদের স্মরণে এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে। দেশব্যাপী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নারায়ণগঞ্জে শিশু শহীদ রিয়া গোপের স্মরণে অনুষ্ঠান, শিশু অ্যাকাডেমিতে জুলাইয়ের শিশু শহীদদের থিম করে আইকনিক ভাস্কর্য স্থাপন এবং শিশুদের জন্য জুলাই আন্দোলনকে উপজীব্য করে গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করা হবে।
২৫ জুলাই (‘চলো ভুলে যাই’): দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট নাট্যমঞ্চ প্রস্তুত করে নাটক প্রদর্শনের আয়োজন।
২৬ জুলাই (‘পলাশীর প্রান্তর’): সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের জমায়েত ও অনুষ্ঠান, মাদরাসার ভূমিকা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং জুলাইয়ের র্যাপ গানের অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমিতে জুলাইয়ের প্রকাশিত বই নিয়ে বইমেলার আয়োজন করা হবে।
২৭ জুলাই (‘ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর গান’): বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক সংলাপ এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
২৮ জুলাই (‘চলো ভুলে যাই’): প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা, জুলাইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনুষ্ঠান, ‘মনসুন আর্কাইভ’ প্রকাশ, ‘চিকিৎসা নেই, লাশ নেই’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং সারা দেশে রক্তদান ও মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন।
২৯ জুলাই (‘বাংলা মা’): জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক প্যানেল ডিসকাশন এবং গাজীপুর অথবা সাভারে শ্রমিকদের সমাবেশ।
৩০ জুলাই (‘চল চল চল’): ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের নিয়ে অনুষ্ঠান এবং অনলাইনে জুলাই স্মরণ।
আগস্ট ১ (‘গণজোয়ার’): ৬৪টি জেলায় এবং সব বাংলাদেশি দূতাবাসে জুলাই নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শন, ‘২৪ জুলাই ফটোগ্রাফারের চোখ দিয়ে’ কফি টেবিল বুক প্রকাশনা এবং জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সমাপ্তি।
আগস্ট ২ (‘আমি বাংলায় গান গাই’): বাংলাদেশের সব জেলার ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং প্রজেকশন ম্যাপিং।
আগস্ট ৩ (‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’): শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত শোভাযাত্রা, রিকশায় জুলাইয়ের গ্রাফিতি অঙ্কন ও রিকশা মিছিল এবং ৬৪টি জেলায় জুলাই নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শনী।
আগস্ট ৪ (‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’): সারা দেশে জুলাই যোদ্ধাদের সমাগম, জুলাইয়ের কার্টুনের প্রদর্শনী এবং ৬৪টি জেলায় ‘স্পটলাইট অন জুলাই হিরোজ’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী।
আগস্ট ৫ (‘শোনো মহাজন’): কর্মসূচির শেষ দিন ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হবে। এদিন ৬৪ জেলার কেন্দ্রে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, শহীদদের জন্য প্রার্থনা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে বিজয় মিছিল, এয়ার শো, গানের অনুষ্ঠান, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং ড্রোন শোর মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই মাসব্যাপী কর্মসূচির লক্ষ্য হলো গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং শহীদদের আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতিরোধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
স্বাআলো/এস