গ্রেফতার আতঙ্ক, আড়ালে চলে যাচ্ছেন শিল্পীরা

চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতারের পর দেশের শিল্পাঙ্গনে এক ধরনের ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত এবং অভিযুক্ত নন এমন তারকারাও ভয়ে আছেন। এর ফলে অনেক জনপ্রিয় শিল্পী এখন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম সীমিত করে এনেছেন, অনেকেই নীরবতা পালন করছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাদের উপস্থিতি কমে গেছে।
জানা গেছে, গ্রেফতারের আতঙ্কে অনেক শিল্পীই গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন ধরছেন না বা নম্বর বন্ধ রেখেছেন। সামাজিক মাধ্যমেও তারা হালনাগাদ করছেন না নিজেদের অবস্থান বা কার্যক্রম।
নুসরাত ফারিয়াকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই মামলায় আরো ১৭ জন তারকাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই তালিকায় রয়েছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা, সোহানা সাবা, মেহের আফরোজ শাওন, জ্যোতিকা জ্যোতি, চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক এবং জায়েদ খান।
কারামুক্ত হলেন নায়িকা নুসরাত ফারিয়া
এই মামলায় আসামি হওয়া চিত্রনায়ক জায়েদ খান জুলাইয়ের শুরুর দিকেই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন এবং সেখানেই অবস্থান করছেন। নিউইয়র্ক থেকে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এসব হাস্যকর মামলা। কারা মামলা করছে, কেনো করছে আর এসব অবান্তর মামলা কেন গ্রহণ করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। শিল্পীদের মধ্যে সরকার দলীয় আয়োজনে কেউ কেউ যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সবাইকে হত্যা মামলার আসামি করাটা হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে এটা তো সবাই বোঝে।
তিনি আরো বলেন, দেখেন আমাকে হত্যা মামলার আসামি বানানো হয়েছে। আমি জুলাইয়ের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। এখনো এখানেই আছি অথচ আমাকে আসামি বানানো হয়েছে। এসবের কোনো তদন্তও করে দেখা হয় না, সরাসরি গ্রেপ্তার। এই কারণে শিল্পীরা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হবে না। তারা একেবারে আড়ালে চলে যাবে।
এদিকে চিত্রনায়ক সাইমন সাদিকও আগেই যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছেন। শিল্পীরা যে আতঙ্কে আছেন তা খ্যাতিমান অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর কণ্ঠেও পাওয়া গেছে।
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেফতারে বিব্রত সংস্কৃতি উপদেষ্টা
তিনি বলেন, নুসরাত ফারিয়াকে আটক করা হয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক। তবে উনি কি অভিনয় করার জন্য বন্দি হয়েছেন, নাকি অন্য কোনো কারণে, সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার না। যদি তিনি অভিনয়ের জন্য বন্দি হয়ে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের শিল্পীদের জন্য লজ্জার এবং দুঃখজনক। যদি খুব পরিষ্কার করে বলি, তাহলে আমরা নিজেরাও বিপদে আছি।
অন্যদিকে, নুসরাতের গ্রেফতারের পর অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী নিজের ভারত সফর বাতিল করেছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মমতাজ ও নুসরাতের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কে তিনি কলকাতার একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে যাননি। সেই প্রতিবেদনে অপু বিশ্বাস ও জ্যোতিকা জ্যোতিসহ অনেক শিল্পীই এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকেই রিয়াজ ও ফেরদৌসের মতো কিছু শিল্পী আড়ালে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু অন্য শিল্পীরা ভাবেননি তাদেরও মামলার মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে শিল্পীদের পাশে নেই দেশের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটি একটি বিবৃতিও দেয়নি। এতে শিল্পীদের মধ্যেও এক ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। একাধিক চলচ্চিত্র ও টিভি তারকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অধিকাংশই ফোন ধরেননি বা নম্বর বন্ধ রেখেছেন। যারা ফোন ধরেছেন, তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্বাআলো/এস