কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবারও দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ এনেছে। একই দিনে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
এই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে গত ২২ এপ্রিল, যখন পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা категориভাবে অস্বীকার করেছে। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ভারত “অপারেশন সিঁদুর” নামে একটি অভিযান চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ঐ রাতেই ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে।
ভারত নিজেদের যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়টি স্বীকার না করলেও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে অন্তত একটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী বুধবার দাবি করেন, করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে, যেগুলো ইসরায়েলের তৈরি। এর মধ্যে একটি ড্রোন লাহোরের কাছে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চার সদস্য আহত হন বলেও তিনি জানান।
ইসরায়েলে তৈরি ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত
অন্যদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। এর জবাবে বৃহস্পতিবার ভারত পাকিস্তানের বিভিন্ন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালায় এবং লাহোরে একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলে একাধিক जोरदार বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রয়টার্সের একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতায় চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে, সাইরেনের শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভারতের সামরিক বাহিনী সন্দেহ করছে, এই হামলা পাকিস্তান থেকেই চালানো হয়েছে। বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে জম্মু অঞ্চলের সাতওয়ারি, সাম্বা, রণবীর সিং পুরা ও আরনিয়া এলাকা লক্ষ্য করে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল, তবে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
হতাহতের বিষয়ে পক্ষই পরস্পরবিরোধী দাবি করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, পাকিস্তানের হামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে অন্তত ১৬ জন নিহত এবং প্রায় ৫৯ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে, ইসলামাবাদ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ভারতের অপারেশন সিঁদুর শুরুর পর থেকে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে ৩২ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন।
এই পাল্টাপাল্টি হামলা ও হতাহতের খবরে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
স্বাআলো/এস