আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ১০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক | July 24, 2025

ইসরায়েলের নয় মাস ধরে চলা অবরোধ ও লাগাতার হামলায় বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকায় এখন বোমার মতোই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ক্ষুধা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে তীব্র খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০ জনে।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত শুধু অপুষ্টি ও অনাহারেই মারা গেছেন ১১১ জন, যার বেশিরভাগই ঘটেছে গত কয়েক সপ্তাহে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ছিলেন ত্রাণপ্রার্থী, যারা মানবিক সহায়তা নিতে এসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, চলতি বছর অনাহারে মৃতদের মধ্যে ২১ জনই ছিল পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। সংস্থাটি আরও জানায়, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন তারা গাজায় কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা পাঠাতে পারেনি। সম্প্রতি কিছু সহায়তা পৌঁছালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।

এদিকে, গাজার পরিস্থিতিকে ‘গণ-অনাহার’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ১১১টি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা। তাদের অভিযোগ, গাজা সীমান্তের বাইরে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ মজুদ থাকলেও ইসরায়েলের বাধার কারণে তা উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম বলেন, “এখন ক্ষুধাও বোমার মতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মানুষ আর শুধু চাহিদা মেটাতে খাচ্ছে না, বরং তারা বেঁচে থাকার জন্য যা পাচ্ছে, তাই মুখে দিচ্ছে।” তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “মানুষ ধীরে ধীরে এক যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ ও প্রস্থানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে রেখে মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত শত শত ফিলিস্তিনি, যারা মানবিক সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিলিস্তিন অঞ্চলের প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন জানান, ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর ক্রমাগত হামলার কারণে গাজার হাসপাতালগুলো এখন বিশাল ট্রমা ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। এমনকি চিকিৎসক, শিক্ষক ও সাংবাদিকেরাও চরম খাদ্য সংকটে থাকায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের একজন আমেরিকান চিকিৎসক নুর শরাফ বলেন, “মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে। এমনকি অনেক চিকিৎসক নিজেরাই খাবার পাচ্ছেন না, তবুও তারা মানুষের পাশে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।”

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo