দেশের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ, তাত্ত্বিক এবং প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর রবিবার (৭ সেপ্টেস্বর) ৯৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম গণমাধ্যমকে এই দুঃসংবাদ নিশ্চিত করেছেন।
ফয়জুল হাকিম জানান, “আজ অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনার পর সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। বিস্তারিত আমরা পরে জানাতে পারবো।”
বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম:
১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তার পিতা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষণের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বদরুদ্দীন উমর। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে তার এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের চিন্তাজগতে প্রভাব:
বদরুদ্দীন উমর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি শুধু একজন লেখক ছিলেন না, ছিলেন একজন গভীর তাত্ত্বিক চিন্তাবিদ। ষাটের দশকে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য নিয়ে তার বিশ্লেষণমূলক লেখাগুলো বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তার লেখা বইগুলোর মধ্যে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭) এবং ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব গ্রন্থে তিনি ধর্ম ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব, ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার এবং সাংস্কৃতিক বিভাজন নিয়ে গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। তার লেখায় মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি প্রবল সমর্থন ফুটে উঠেছে।
শেষ জীবন ও সম্মাননা:
গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপজনিত সমস্যায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং দীর্ঘ ১০ দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরেন। বয়সের ভার এবং শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তার বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান সবসময় প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
উল্লেখ্য, বদরুদ্দীন উমর ২০২৫ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, যদিও তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চায় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বদরুদ্দীন উমরের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বাআলো/এস