ঔষধি গুণে ভরা বাহারি কদম ফুল

ষড়ঋতুর বাংলাদেশের প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টায় বাহারি অলংকারে, ফুল-ফল আর বাহারি বৃক্ষরাজির মিশ্রণে। তেমনি বর্ষার আগমনে বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিতে ফুটছে ঔষধি গুণে ভরা বাহারি কদম ফুল। বাঙালি জীবনে ‘বর্ষা ছাড়া কদম’ আর ‘কদম ছাড়া বর্ষা’ ভাবা যায় না। এবার বর্ষা শুরুর খানিক আগেই বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ জনপদে ফুটেছে কদম। স্বর্ণকেশী কদম নিয়ে খেলায় মজেছে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা। বর্ষা ঋতুতে ফোটা মোহনীয় ফুল কদম শোভা পাচ্ছে কিশোর-কিশোরী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে।

উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি গাছ শ্বেতদ্রোণ

নানার ঔষধিগুণে ভরপুর কদমের সৌন্দর্য্য নিয়ে কবিগুরু লিখেছেন, বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান। মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের আখড়া বাজার ও উপজেলা সদর যেতে সড়কের পাশে প্রায়ই চোখে পড়ে গাঢ় সবুজ গাছে ফাঁকে ফাঁকে হলুদ পাপড়িদণ্ডে শুভ্রপরাগিত কদমফুল। মন মুগ্ধ ঘ্রাণে মোহিত করে রেখেছে চারপাশ। গ্রামাঞ্চলে কিশোর-কিশোরীরা খেলায় ব্যবহার করে এই ফুল। শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকে।

অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন শিক্ষার্থী, চাঁদ দত্ত রায় (৮) বলেন, আমাদের স্কুলের সামনে কদম গাছ থেকে সবাই মিলে ফুল পেড়ে আমরা খেলা করছি। কদম ফুল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে অনেক ভালো লাগে। পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের শিক্ষার্থী আলী নাজিফা তাসনীম (৯) বলেন, আমাদের বাড়ির পিছনে অনেকগুলো কদম গাছ। ভাই আজকে গাছ থেকে ফুল এনে দিয়েছে। সুন্দর এই ফুলের ঘ্রাণ খুব ভালো লাগে আমার।

শিমুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে

অকল্পনীয় সৌন্দর্য্যের অধিকারী কদম ফুল বাঙ্গালীর লোকগীতি, বাংলা সাহিত্যাঙ্গণ ও রাধাকৃষ্ণের প্রেম বিরহের গল্পেও জায়গা করেছে দৃষ্টি নন্দন কদম। এই কদম গাছ গ্রাম-শহরে সড়কের পাশে, বন-বাদড়ে অনাদর আর অবহলোয় এক সময় ব্যাপক হারে যত্রতত্র জন্মে ও বেড়ে উঠে আমাদের প্রকৃতিকে আরো মোহনীয় করতো।

মনোমুগ্ধকর কদম গাছের আদি জন্মভূমি, এশিয়ার চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ অঞ্চলে। সপুষ্পক শ্রেণির কদমের বৈজ্ঞানিক নাম (Anthocephalus indicus)। অগনিত ফাটল ও রুক্ষ বৃক্ষদেহ ও সোজা ডালের বিশাল আকৃতির কদম গাছ। গাঢ় সবুজ বিশাল পত্ররাজি। শীতকালে পাতা ঝরে ন্যাড়া হলেও বসন্তের ছোয়ায় কুঁড়ি বহর নিয়ে আগমন হয় প্রকৃতিতে।

কাঠ, ঔষধিগুণ ও সৌন্দর্যে ভরা কদমের রয়েছে বহুনাম, নীপ; কদম; কদম্ব; কদম্বক; ললনাপ্রিয়, সুরভী, কর্ণপুরক, পুলকি, মঞ্জু কেশিনী, সিন্ধুপুষ্প ও মেঘামপ্রিয়, বৃত্তপুষ্প প্রভৃতি।

সম্প্রতিক সময়ে জলবায়ূর প্রভাবসহ নানা কারণে জৈষ্ঠের শেষভাগেও কদম ফোটতে দেখা যায়। বৃষ্টির পানি কদম গাছের শেকড়ে পরলে, ছোট্ট ডালাগ্রে সঙ্গিছাড়া সুভাষিত কোমল পুষ্পকলি ফুটে।

পশু-গাছ-আসবাবপত্র জামানতে মিলবে ব্যাংক ঋণ, সংসদে বিল পাস

হলুদ-সাদা মিশ্রিত রঙ্গে অগণতি পরাগদন্ড বা পাপড়ির গুচ্ছে গোলাকৃতির এ পুষ্পদেহ। যেন শিল্পী তৈরি সুনিপুণভাবে সাজানো সোনালী কোমল ক্রিকেট বল। আকার গন্ধ আর সৌন্দর্য্যে অনন্য কদম ফুল সাধারনত আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টিস্নাত দিনে ফোট। সেজন্য কদমকে বর্ষা ঋতুর ফুল বলা হয়। পাখিদের মঙ্গাকাল খ্যাত ’বর্ষা’য় টক স্বাদের এই কদম ফুল কাঠবিড়ালি ও বাদুরের প্রিয় খাবার।

ঔষধীগুণে ভরা কদম গাছের বাকল জ্বর প্রতিরোধ করে। শিশুদের কৃমিনাশক। মুখের ঘা, দুর্গন্ধ দূর করতে ফুল কেটে সিদ্ধ করা পানিতে কুলকুচি করতে হয়। কমবয়সী কদম গাছের ছাল্ বা পাতা বেটে গরম করে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে দিলে আঘাত নিরাময় হয়।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

বাধ্যতামূলক ছুটিতে ৬ ব্যাংকের এমডি

আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটিসহ মোট ছয়...

সংসার পাতলেন তাহসান, ভাঙলো বুঝি মিথিলার!

ঘটনা ২০১৭ সালের। বিনোদন জগতের ঢালিউড অভিনেতা-গায়ক তাহসান খান...

পুকুরে ভাসছিলো যুবকের অর্ধগলিত লাশ

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার সদর উপজেলার একটি পুকুর থেকে...

১৮ কোটি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন...