স্পোর্টস ডেস্ক: শুরুতেই নেই দুই উইকেট। ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। থুসারার হাফ ভলির মতো বলটি ড্রাইভ করতে গিয়েছিলন, কিন্তু ঠিকঠাক করতে পারলেন না। কাভারে ধরা পড়েছেন। তাতে পাওয়ারপ্লেতেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে তিন উইকেট।
সৌম্যর ধাক্কা সামলে ওঠা হয়নি। এবার বিদায় নিলেন আরেক ওপেনার তানজীদ। তুশারাকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে চেয়েছিলেন, ব্যাটে বলে এক হয়নি, ইনসাইড এজ হন বাঁহাতি এই ওপেনার। ছয় বলে তিন রান করেন তিনি। বাংলাদেশ ছয় রানে হারায় দুই উইকেট। ক্রিজে শান্তর সঙ্গী লিটন। দুইজনের লম্বা জুটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
স্কোরবোর্ডে অল্প পুঁজ। শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন শুরুতেই উইকেট। কাজটা সহজ করে দিয়েছেন সৌম্য সরকার। ধনাঞ্জয়াকে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন। হাসারাঙ্গা ক্যাচ ধরেই মেতে ওঠেন বুনো উল্লাসে। শূন্য রানে বিদায় নেন সৌম্য, বাংলাদেশ এক রানে হারায় প্রথম উইকেট। ক্রিজে তানজীদের সঙ্গী লিটন।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৯ উইকেটে ১২৪ রানে থামলো শ্রীলঙ্কা। প্রথম ছয় ওভারে শ্রীলঙ্কার রান দুই উইকেটে ৫৩। পরের ১৪ ওভারে মাত্র ৭১! হারিয়েছে সাত উইকেট। রিশাদের ঘূর্ণি জাদু, মোস্তাফিজ-তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দুর্দান্ত কামব্যাক করে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতে বাউন্ডারির পসরা সাজালেও মাঝে একটি বাউন্ডারির জন্য শ্রীলংকাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৩ বল! সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন নিসাংকা। আর কোনো ব্যাটার কার্যকরী ইনিংস খেলতে পারেননি। রিশাদ-মোস্তাফিজ নেন ৩টি করে উইকেট। তাসকিন দুই ও তানজীম শেষ ওভারে নেন একটি উইকেট।
রিশাদের ঘূর্ণি জাদুর চাপ সামলে না উঠতে তাসকিনের আঘাত। দলীয় ১৮ ও নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে শানাকাকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। কুইকারে খোঁচা দিয়ে বসেন শানাকা, বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। সাত বলে তিন রান করেন শানাকা। প্রথম ওভারে ১২ দেয়া তাসকিন চার ওভারে দেন মাত্র ২৫! নেন দুই উইকেট। তাসকিনের পর নিজের শেষ ওভারে মোস্তাফিজ নেন আরও একটি উইকেট। থিকাশানাকে ফেরান দ্য ফিজ। চার ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নেন তিন উইকেট।
রিশাদের আরো একটি উইকেট। এবার দারুণ লেগব্রেকে ফেরালেন ধনাঞ্জয়াকে। ২৬ বলে ২১ রান করেন এই ব্যাটার। এর আগের ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে চেপে ধরেন, এবার ধনাঞ্জয়াকে আউট করে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা কার্যত থামিয়ে দিলেন রিশাদ। চার ওভারে রান দিয়ে তিন উইকেট নেন এই লেগ স্পিনার। ক্রিজে ম্যাথুজের সঙ্গী শানাকা।
১৩ ওভারে শতরান পূর্ণ করে শ্রীলঙ্কা। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ব্রেক থ্রো এনে দেন রিশাদ। মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ধরা পরেন আসালাঙ্কা। ২১ বলে ১৯ রান করেন তিনি। পরের বলেই ক্রিজে এসে স্লিপে খোঁচা দিয়ে শূন্য রানে ফেরেন হাসারাঙ্গা। পরপর দুই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ। ১৯ রান দিয়ে রিশাদ নেন দুই উইকেট। ক্রিজে ধনাঞ্জয়ার সঙ্গী ম্যাথুজ।
নিসাঙ্কা একাই বাংলাদেশি বোলারদের ভীষণ চাপে রাখে। তার ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট নিয়েও ব্যাকফুটে থাকে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষ হলেও নিসাঙ্কা ঝড় চলতে থাকে। অবশেষে তাকে থামান মোস্তাফিজ। অফে অ্যাঙ্গেল করা বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন নিসাঙ্কা। মাত্র ২৮ বলে ৪৭ রান করেন এই ব্যাটার। ইনিংসের নবম ওভারে নিসাঙ্কার আউটে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। মোস্তাফিজ দুই ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। ক্রিজে ধনাঞ্জয়ার সঙ্গী আসালাঙ্কা।
দুই উইকেট নিলেও শ্রীলঙ্কার রানের চাকা থামাতে পারেনি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে দলটি ৫৩ রান নিয়েছে। বাংলাদেশি বোলারদের উপর একাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন নিসাংকা। তিনি ১৮ বলে ৩৪ রান করেন এই সময়ে। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে এলোমেলো ছিলেন সাকিব। তিনি দুই ওভারে ২৪ রান দেন। প্রায় অর্ধেক রান দেন সাকিব একাই। একটি করে উইকেট নেন তাসকিন-মোস্তাফিজ।
আগের ওভারে চারটি বাউন্ডারি হজম করে এলোমেলো বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজ। অফের বল মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন কামিন্দু। পাঁচ বলে চার রান করেন তিনি। ক্রিজে নিসাঙ্কার সঙ্গী ধনাঞ্জয়া।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব। চারটি চারের মারে নিসাংকা ১৬ রান নেন। বাকি দুই বল ডট। দুই ওভারে ২৪ রান দেন অভিজ্ঞ এই বোলার।
টানা দুই চারের পর কুশলকে বোল্ড করে ফেরালেন তাসকিন
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে টানা দুই চারের পর কুশলকে বোল্ড করে ফেরালেন তাসকিন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন তাসকিন। প্রথম দুই বলে হজম করেন চার। ব্যাক অব লেন্থে করা তৃতীয় বলে দোটানায় থেকে বোল্ড হন কুশল। আট বলে ১০ রান করেন তিনি। ক্রিজে এসে পরের বলে আবার চার হাঁকান নতুন ব্যাটার কামিন্দু। তাসকিন প্রথম ওভারে ১২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। ক্রিজে নিসাঙ্কার সঙ্গী কামিন্দু।
তানজীমকে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মিডউইকেটের উপর দিয়ে চার মেরে রানের খাতা খোলেন নিসাঙ্কা। এরপর এই ওভারে মাত্র ১ রান নিতে পারে দলটি। দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আসেন বোলিংয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ অতিরিক্ত রান দিয়ে বসে। তানজীম থ্রো করলে সেটি আটাকাতে পারেননি লিটন। বাংলাদেশ ১ রানের জায়গায় দেয় ৫ রান। ১ বল পরেই সৌম্য বল ধরতে গিয়েও ধরতে পারেননি।
গ্রুপ ডি থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করা শ্রীলঙ্কার এটি দ্বিতীয় ম্যাচ। যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ছয়টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান সাকিব।
আমরা প্রথমে বোলিং করতে চাই. কারণ শুরুতে আমরা কিছুটা সীম ও সুইং আশা করি। বিশেষ করে এই ফরম্যাটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, গত কয়েক দিনে চার টপ অর্ডার ব্যাটার অনেক পরিশ্রম করছে।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাজে পারফর্ম করার পরও লিটনকে বিশ্বকাপ দলে রাখায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল নির্বাচকদের। যুক্তরাষ্ট্রর বিপক্ষে সিরিজ কিংবা প্রস্তুতি ম্যাচ কোথাও ফর্মে ফেরার আভাস না দিলেও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জাকের আলী অনিকের পরিবর্তে লিটনে আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে তাসকিনের ইনজুরি শংকা ঘিরে ধরেছিলো বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টে। পিছিয়ে যায় দল ঘোষণা। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের পরামর্শে তাসকিনকে নেওয়া হয় দলে, বানানো হয় সহ অধিনায়ক। যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ, দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলা তাসকিন নিজেকে প্রস্তুত করে প্রথম ম্যাচেই তুলবেন গতির ঝড়। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে ১ জুন প্রস্তুতি ম্যাচে চোট পাওয়া শরিফুল ইসলাম ছিটকে পড়লেন প্রথম ম্যাচ থেকে। তাসকিনের সঙ্গী বাকি দুই পেসার হলেন তানজীম-মোস্তাফিজ।
পাথুম নিসাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস , কামিন্দু মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিথ আসালাঙ্কা, ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা (অধিনায়ক), অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দাসুন শানাকা, মহেশ থিকশানা, নুয়ান থুশারা, মাথিশা পাথিরানা।
প্রথমে ব্যাট করতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা দুজন সত্যিকারের ফাস্ট বোলার এবং দুইজন জেনুইন স্পিনার, দুজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিয়ে নামছি। ম্যাচের পরিস্থিতির ওপর এটা নির্ভর করে আমি কোথায় ব্যাট করতে নামব।
বিশ্বকাপ বাদে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার রেকর্ড বেশ ভালো। ষোলোবারের দেখায় পাঁচ ম্যাচে তারা হেরেছে। বাকিগুলোতে এসেছে জয়। শেষ তিনবারের দেখায় দুইবারই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ জিতেছে একটিতে। তবে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ কখনোই জিততে পারেনি। ২০২১ সালে সবশেষ দেখায় শ্রীলঙ্কা পাঁচ উইকেটে জয় পেয়েছিল। এর আগে টি-টোয়েন্টি মহাযজ্ঞে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৭ সালে, প্রথম আসরে। সেবার ৬৪ রানে জয় পায় সিংহের দল।
বিশ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সবশেষ দল হিসেবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের মিশন শুরু হচ্ছে আজ। বাংলাদেশের খেলা শুরুর হওয়ার এক ঘণ্টা আগে মাঠে নামে নিউ জিল্যান্ড।
স্বাআলো/এস/বি