বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের গুঞ্জন সত্যি হতে চলেছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বিসিবির পরিচালক হতে আগ্রহী এবং পরবর্তীতে সভাপতি পদের দিকে তার নজর থাকবে বলে জানিয়েছেন।
দেশের একটি প্রথমসারির পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এবং ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের প্রতিবেদনে তামিম ইকবাল তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কেউ আগেভাগে বলতে পারে না যে তিনি সভাপতি হবেন। আমি নিজেও অনেক কিছু দেখি ও শুনি। কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো আমি বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেব কি না। যদি ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) কথা বলি, সেখানে সরাসরি সভাপতি পদে ভোট হয়। কিন্তু বিসিবি আলাদা। এখানে প্রথমে পরিচালক হতে হয়।”
বিসিবির গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া:
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২৫ সদস্যের বোর্ডে তিন ক্যাটাগরিতে পরিচালক নির্বাচিত হন।
ক্যাটাগরি-১: ঢাকাভিত্তিক ক্লাবগুলো থেকে ৭৬ জন কাউন্সিলরের ভোটে ১২ জন পরিচালক নির্বাচিত হন।
ক্যাটাগরি-২: আঞ্চলিক ও জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি হিসেবে ৮ বিভাগ ও ৬৪ জেলার কাউন্সিলররা ভোট দিয়ে ১০ জন পরিচালক নির্বাচন করেন।
ক্যাটাগরি-৩: ‘অন্যান্য প্রতিনিধি’ কোটায় একজন পরিচালক নির্বাচিত হন।
এছাড়া, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ২ জন পরিচালক মনোনীত করে।
এরপর নির্বাচিত পরিচালকরা নিজেদের মধ্য থেকে ভোট দিয়ে সভাপতি নির্বাচন করেন।
পরিচালক থেকে সভাপতি হওয়ার লক্ষ্য:
তামিম ইকবাল জানিয়েছেন, তিনি গঠনতন্ত্র ও প্রক্রিয়া মেনেই প্রথমে পরিচালক হতে চান। এরপর যদি পর্যাপ্ত সমর্থন পান, তবে সভাপতি পদের জন্য বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, “যদি দু’জন সভাপতি প্রার্থী হন, তবে পরিচালকরা ভোট দিয়ে সভাপতি বেছে নেন। তাই যদি প্রশ্ন করেন নির্বাচনে অংশ নেব কি না, আমার বলার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। এবার আমি পরিচালক পদে নির্বাচন করছি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসতে হবে। আমার বিশ্বাস– যদি আমি বোর্ডে আসি তবে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। এখনই বলা বোকামি হবে যে আমি সভাপতি হতে চাই। যদি দেখি পর্যাপ্ত সমর্থন আছে, তখন বিবেচনা করব।”
ক্রিকেট প্রশাসনে আসার প্রস্তুতি ও দৃষ্টিভঙ্গি:
বিসিবিতে আসার প্রস্তুতি তামিম আরও আগেই শুরু করেছেন। তিনি দুটি ক্লাবে সংগঠক হিসেবে বিনিয়োগ করেছেন এবং এর যেকোনো একটির কাউন্সিলর হিসেবে পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তামিম মনে করেন, এমন প্রার্থী বেছে নেওয়ার সময় এসেছে, যারা সত্যিই দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সবাই বলে ক্রিকেটে রাজনীতি থাকা উচিত নয়। কিন্তু আসলে কী হচ্ছে? একে অপরকে আক্রমণ, গুজব ছড়ানো, এসবই চলছে। অথচ আসল আলোচনা হচ্ছে না, কে ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী। অনেকেই পরিচালক হতে চান, কিন্তু আসল মনোযোগ দেওয়া উচিত কারা আসলেই যোগ্য।”
বিসিবির নির্বাচনের সময়সূচি:
বিসিবির সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে নতুন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনের কমপক্ষে ৩০ দিন আগে সভাপতির নির্দেশে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কাউন্সিলর মনোনয়নের নোটিশ দেবেন। এরপর নির্বাহী কমিটি গঠিত নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সময়সূচি ঘোষণা এবং নির্বাচনের নিয়ম চূড়ান্তসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে।
তামিম ইকবালের এই ঘোষণা দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্বাআলো/এস
