রুহুল আমিন: যশোরের ভৈরব নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী সমাধানের দাবি করেছেন পুরাতন কসবার ঘোষপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো। বাঁশের বল্লা প্রকল্পকে প্রাথমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বাগত জানালেও তারা গবেষণামূলকভাবে স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন।
ভৈরব নদীর ভাঙ্গনে অনন্ত ৮০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বসতভিটাসহ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের ৫০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে এই অসহায় পরিবারগুলো রাস্তায় রাস্তায় ছুটছেন। সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত তাদের পাশে কোন ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউ। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মাথাগোজার স্থায়ী ঠাঁইয়ের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন।
জানা গেছে, যশোর শহরের পুরাতন কসবার মধ্যে ভৈরব নদীতে উপশহর বাবলাতলা ব্রীজ থেকে ঘোষপাড়া মিঠুর বাগান পর্যন্ত বসবাসকারী পরিবারগুলোর বসতভিটাসহ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ৮০ টি পরিবারের বসতভিটা ও বাড়িঘর মিলে আনুমানিক ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই অঞ্চলে নদীর ধারে কারো বসতবাড়ি নেই। সবার বাড়িঘর ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মূলত নদী থেকে অতিরিক্ত বালি উত্তোলনের জন্য এই সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই অঞ্চলে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারি ছিলেন যশোর জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন। টাক মিলনের নেতৃত্বে সেখান থেকে বালি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে এখান থেকে বালি উত্তোলন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও বিষয়টি দেখে না দেখার ভ্যান করে থাকতেন। টাক মিলনের মাত্রাতিরিক্ত বালি উত্তোলনের কারণে মূলত বাড়িগুলো বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদী শাসনের জন্য নামমাত্র বাঁশ-বল্লা প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। দায়সারা গোছের কাজ হয়েছে। উপযুক্ত মাত্রায় জিওব্যাগ, বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হয়নি। হালকা বৃষ্টি হলেই পাড়ের পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকবে। কোনভাবেই ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে না।
ভুক্তভোগী পরিবারের আশিকুর রহমান জানান, তিনি পেশায় ছাত্র। তার বাবা ওসমান আলী পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। বাবা মারা গেছেন। তার পরপরই বাড়িটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা ও বাড়িঘর মিলে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তার। বাড়ি হারিয়ে তিনি পথে বসেছেন। এখন কি করবেন ভেবে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছেন। শুধু তিনি নন, তার মত ৮০ টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারো মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদী শাসনের জন্য বাঁশ-বল্লা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পকে ভুক্তভোগীরা স্বাগত জানালেও সবার দাবি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বাঁশ-বল্লার কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করে নদীর ধরে উঁচু করে ভরাট করলেও অস্থায়ীভাবে হলেও ভুক্তভোগীদের উপকার হতো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোন সুনজর নেই। বিষয়টি দায়সারাভাবে দেখা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী তুহিন হোসেন, গৌতম বসু, আজিবর রহমান, পুটে বিশ্বাসসহ অনেকে একই অভিযোগ করেন। তাদের সবার দাবি নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার বিকল্প নেই।
যশোর অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ৩১৫ মিটার দৈর্ঘ্যে ও দুই মিটার প্রস্থ জুড়ে বাঁশ-বল্লা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ৩ হাজার ৬০৪ টি জিওব্যাগ দেয়া হয়েছে। বিলীন হয়ে যাওয়া বসতভিড়ায় নতুনভাবে মাটি ভরাট করা হয়নি। মাত্র ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্পে এটা করা হয়েছে। অর্থের অভাবে মাটি ভরাট করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এই প্রকল্পে আরো বাড়ানো হবে। আশা করা যায় বাঁশ-বল্লা প্রকল্পে যে কাজ হয়েছে তাতে নতুন করে আর মাটি ধস হবে না। জায়গাটি শক্তিশালী থাকবে। ভুক্তভোগীরা মাটি ভরাট করে সেখানে পূর্বের মত বসবাস করতে পারবেন।
স্বাআলো/এস