নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে এক ব্যক্তির দেহে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু সংক্রমণের সন্দেহে অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল যশোরে আসছে। ছয় সদস্যের এই দলটি বৃহস্পতিবার (১ মে) যশোরে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।
আইইডিসিআর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সম্প্রতি যশোরের রামনগর এলাকার এক ব্যক্তির শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কিছু লক্ষণ ও সন্দেহজনক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হওয়ায় আইইডিসিআরকে অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইইডিসিআর এই তদন্ত দল গঠন করেছে। দলটি যশোরে কয়েকদিন অবস্থান করে সন্দেহভাজন ব্যক্তির রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা প্রতিনিধি দল আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যশোরে আসছে। তারা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবে।
দুপুরের মধ্যে ঝড় বইতে পারে যশোরসহ যেসব জেলায়
এর আগে গত মার্চ মাসে যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছিল। ১২ মার্চ ঢাকার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ আসার পর ১৩ মার্চ খামারটির ৬টি শেডের মোট ২,০৭৮টি মুরগি মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। খামার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে খামারটি মুরগিশূন্য এবং জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান জানিয়েছিলেন, শনাক্ত হওয়া ভাইরাসের ধরণ জানতে নমুনা বিদেশে পাঠানো হবে, তবে প্রাথমিকভাবে মৃদু লক্ষণ দেখা গেছে। তিনি সকল সরকারি পোলট্রি খামার এবং খামারিদের সংগঠনকে সতর্ক থাকার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি ক্রেতাদের আতঙ্কিত না হয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁস-মুরগি ও ডিম খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক আইইডিসিআর টিমের আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত মার্চে সরকারি খামারে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেটি ছিল ‘লো প্যাথোজেনিক’ বা কম ক্ষতিকর ধরনের। খামারিদের সতর্কতার সঙ্গে মুরগি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল এবং এরপর অন্য কোনো খামারে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তিনি এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।
যশোরে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০০৭ সালের মার্চে প্রথম বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয় এবং সে বছর ১০ লাখের বেশি মুরগি মেরে ফেলা হয়েছিল। ২০০৮ সালের মে মাসে প্রথম মানবদেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
পোল্ট্রি খাত দেশের মাংসের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি পূরণ করে। তবে করোনা মহামারি এবং পরবর্তীতে প্রাণিখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, বার্ড ফ্লু নতুন করে ছড়িয়ে পড়লে তা এই খাতের জন্য আরেকটি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তারা ফ্লু বিস্তার রোধে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর উভয়ই জানিয়েছে, যশোরে মানবদেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের সন্দেহ থাকলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
স্বাআলো/এস